SIR শুরু হতেই জীবিত ৩৫ বছর আগে মৃত করিম

karim-sheikh-returns-home-after-35-years-murshidabad-sir-survey

মুর্শিদাবাদ: কখনও কখনও বাস্তব জীবন সিনেমাকেও হার মানায়। মুর্শিদাবাদের ভাগ্যংগোলার এক গ্রামে ঘটেছে এমনই এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। করিম শেখ নামের এক ব্যক্তি যিনি ৩৫ বছর আগে নিজের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, হঠাৎই ফিরে এসেছেন — সেটিও নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে শুরু হওয়া ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া “SIR” (Special Information Revision) এর সূত্রে।

Advertisements

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাগ্যংগোলার করিম শেখ প্রায় ৩৫ বছর আগে সংসারে অশান্তি এবং কাজের সন্ধানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁর পরিবার ভেবেছিল তিনি হয়তো কোথাও গিয়েছেন কাজের খোঁজে, কিন্তু দীর্ঘ সময় কোনও খোঁজ না পাওয়ায় ধীরে ধীরে তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

   

করিম শেখের স্ত্রী বছর কয়েক অপেক্ষা করার পর সমাজের চাপে এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে তাঁর স্বামীর জমিজমা বিক্রি করে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই ধরে নিয়েছিল করিম আর ফিরে আসবেন না।

কিন্তু, এ বছর নির্বাচন কমিশনের “Special Information Revision” (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর করিম শেখ নিজের পুরোনো নথিপত্র পুনরুদ্ধারের জন্য জন্মভূমিতে ফেরেন। গ্রামের মানুষ প্রথমে তাঁকে চিনতেই পারেননি, কারণ এত বছর পরে তাঁর চেহারায় স্পষ্ট বার্ধক্যের ছাপ। কিন্তু তিনি যখন নিজের পরিবারের নাম, বাবার নাম, এবং জমির খতিয়ান নম্বর পর্যন্ত সঠিকভাবে বলে দেন, তখন সকলে স্তম্ভিত হয়ে যান।

সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্তটি ঘটে যখন তাঁর ভাইয়েরা এগিয়ে এসে করিমকে জড়িয়ে ধরেন। গ্রামের পরিবেশ মুহূর্তে আবেগে ভরে ওঠে। করিমের ভাই জানিয়েছেন, “আমরা ভেবেছিলাম দাদা আর নেই। আজ নির্বাচন কমিশনের এই সার্ভের জন্যই আমাদের দাদা ঘরে ফিরেছে।

Advertisements

এটা যেন ঈশ্বরের ইশারা।” করিম শেখ জানিয়েছেন, “আমি অনেক বছর আগে রাজস্থানে গিয়ে কাজ করছিলাম। পরে কাগজপত্র হারিয়ে যায়, আর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগও ছিন্ন হয়ে যায়। বুড়ো বয়সে নথির দরকার পড়ায় বাড়ি ফিরলাম।”

ভাগ্যংগোলার এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, “যদি এই সার্ভে না হতো, তাহলে হয়তো করিম শেখের পরিবারের সঙ্গে দেখা হত না। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ যে শুধু ভোটার তালিকা সংশোধন নয়, সামাজিক পুনর্মিলনেরও একটি উপায় হয়ে উঠেছে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।”

এলাকার স্থানীয় প্রশাসনও করিম শেখের ফিরে আসাকে স্বাগত জানিয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “আমরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব যাতে করিমবাবু তাঁর সমস্ত নথি ও জমির আইনি অধিকার পুনরুদ্ধার করতে পারেন।” ৩৫ বছর পর নিজের গ্রামে ফিরে করিম শেখ বলেন, “এই মাটির গন্ধ ভুলিনি কখনও। শুধু সময়টাই আমাদের আলাদা করে রেখেছিল।” ঘটনাটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, অনেকেই এটিকে “নির্বাচন কমিশনের মানবিক দিকের এক অনন্য উদাহরণ” বলে মন্তব্য করছেন।