ভোটের আগে কৃষিকাজে ব্যস্ত মন্ত্রী, ভিডিওতে চর্চা

শালবনী: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজনৈতিক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন ছবি। প্রচলিত জনসভা বা রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে গিয়ে শাসক ও বিরোধী দুই দলেরই নেতারা মাঠে নেমে কৃষিকাজে হাত লাগাচ্ছেন। এই মানবিক দৃশ্যই বর্তমানে সমাজমাধ্যমে জোরালো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

Advertisements

ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কাপাটকে আলু চাষ করতে দেখা গিয়েছিল নিজের এলাকার এক কৃষকের জমিতে। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে মাটিতে নেমে আলু রোপন করছেন, কাদায় ভিজে রয়েছে পোশাক। ভিডিওটি পোস্ট হতেই ভাইরাল হয়ে যায়, এবং বিজেপি শিবির দাবি করে “এটাই প্রকৃত গ্রাউন্ড কানেক্ট।” তৃণমূল পাল্টা বলেছে, “বিজেপির নেতারা এখন প্রচারের জন্য ভিডিও বানাতে ব্যস্ত।”

   

ঠিক এর মধ্যেই জঙ্গলমহলের শালবনী থেকে উঠে এল আরেকটি ভিডিও, যা আরও তীব্র আলোড়ন তুলেছে। শালবনীর বিধায়ক ও রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোকে দেখা গেছে মাঠে ধান কাটতে। কাদা-মাখা লুঙ্গি, সাধারণ গামছা মাথায় বেঁধে কৃষকের মতোই হাতে কাস্তে নিয়ে মাঠে কাজ করছেন তিনি। শ্রমিকদের সঙ্গে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ধান ছড়াচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করছেন।

গ্রামবাসীদের অনেকে জানিয়েছেন, মন্ত্রী আগেও মাঝে মাঝে কৃষিকাজে যোগ দিতেন। তবে নির্বাচনের আগমুহূর্তে এই ভিডিও সামনে আসায় রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠছে। মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, “আমি কৃষকের ছেলে। মাঠে কাজ করা আমার অভ্যাস। রাজনীতি পেশা হলেও মাটি আমার শিকড়।”

তবে বিরোধীদের দাবি, নির্বাচনের ঠিক আগে মাঠে নেমে কাজ করার এই প্রবণতা নিছক ভোটের স্টান্ট। বিজেপির কটাক্ষ “নির্বাচন এলেই তৃণমূল নেতাদের কৃষিপ্রেম জাগে।” পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য, “আমাদের নেতারা বছরের পর বছর কৃষকদের সঙ্গে কাজ করেন, ভিডিও বানানোই বিজেপির কাজ।”

Advertisements

এই দু’পক্ষের তীব্র কথা–কাটাকাটির মাঝেও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া বেশ ইতিবাচক। শালবনীর এক গ্রামবাসীর কথায়, “মন্ত্রীকে মাঠে দেখে ভালো লাগে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কীভাবে বাঁচে, তা তিনি বোঝেন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলার ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কৃষিনির্ভর। ফলেই মাটির কাছাকাছি থাকার বার্তাই নির্বাচনের আগে বড় ভূমিকা নিতে পারে। এই ধরণের ভিডিও, যা আবেগ ও বাস্তবতার সংমিশ্রণে তৈরি, তা ভোটের কাছে প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকদের দাবি, “এই লড়াই এখন শুধু রাজনৈতিক মঞ্চে নয়, কৃষিজমিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।” ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে নেতাদের কৃষিকাজে অংশগ্রহণ শুধুমাত্র সাধারণ দৃশ্য নয়, বরং রাজনৈতিক মাঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। আগামী দিনে আরও এমন ভিডিও সামনে আসতে পারে, এমনটাই অনুমান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।