শিশুমৃত্যু ঘিরে সরকারি হাসপাতালে বিক্ষোভ, গ্রেফতার ২

মিলন পণ্ডা, এগরা: পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় সরকারি হাসপাতালে (Egra Hospital) ফের চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগে চাঞ্চল্য। মঙ্গলবার দুই মাসের এক শিশুর মৃত্যু ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। শিশুর মৃত্যুর পর চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তুলে মৃতের পরিবারের সদস্যরা বিক্ষোভে সামিল হন। পরিস্থিতি মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং সেই আবেগের মাঝেই পরিবারের কয়েকজন সদস্য কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীর ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ।

ঘটনার পরই পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। মারধর ও হেনস্থার অভিযোগে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা হল কামরুল হোসেন ও রাজশেখর মাইতি। আক্রান্ত পুলিশকর্মী রঞ্জিত বার্গ বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এগরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে এগরার আলংগিরি এলাকার বাসিন্দা তপন প্রধান তাঁর দুই মাসের অসুস্থ শিশুপুত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। শিশুটি জ্বর ও সংক্রমণে ভুগছিল। সাত দিন ধরে চিকিৎসা চলার পর মঙ্গলবার সকালে শিশুটি মারা যায়। এরপরই পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনেন।

Advertisements

মৃত শিশুর মা বলেন, “আমার বাচ্চার জ্বর হয়েছিল, তাই হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। সাত দিন ধরে চিকিৎসা চলল, কিন্তু ডাক্তাররা ভালো করে চিকিৎসা করেননি। আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। বাচ্চাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও বাধা দেন। শেষে আজ সকালে আমার বাচ্চা মারা গেল।”

তিনি আরও দাবি করেন, “বাচ্চা মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের এক সিকিউরিটি কর্মী আমাদের মুখের ওপর বলে দিল, একটা বাচ্চা গেলে আরেকটা আসবে। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরেই ঝামেলা বাধে।”

এই কথাকে কেন্দ্র করে মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়ায়। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর জামা টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয়, শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়। পুরো ঘটনাটি হাসপাতালের সিসিটিভিতে ধরা পড়ে, এবং সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে।

ঘটনার পরপরই এগরা থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশকর্মীর ওপর প্রাণঘাতী হামলা ও জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এগরা থানার এক আধিকারিক বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কাঁথি আদালতে তোলা হয়েছে। আদালত দু’জনের জামিনের আবেদন নাকচ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।”

হাসপাতালের সুপার সমীর আচার্য বলেন, “এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমরা রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাচ্ছি। মৃত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে হাসপাতাল প্রশাসন থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “যদি কোনও নার্স বা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের অভিযোগ বাক্সে লিখিতভাবে জানাতে পারেন। শিশুটি ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই গুরুতর অসুস্থ ছিল।”

স্থানীয় বাসিন্দা মৃণাল পণ্ডা বলেন, “হাসপাতালের সিকিউরিটি ও কর্মীদের ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। রোগীর পরিবারের সঙ্গে চিকিৎসকদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না। হাসপাতালের ভিতরে রোগীদের ও পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। প্রশাসনের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”

ঘটনার পর থেকে এগরা মহকুমা জুড়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসন উভয়েই পৃথকভাবে তদন্ত শুরু করেছে। আক্রান্ত পুলিশকর্মীর অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়ায় নজরদারি জারি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisements