আহমদপুর–কাটোয়া রেলপথে যাত্রী পরিষেবা উন্নতির দাবিতে গণ-ডেপুটেশন কর্মসূচি

বীরভূম: বীরভূম জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ আহমদপুর–লাভপুর–কীর্ণাহার–কাটোয়া (Ahmadpur–Katwa) রুটে যাত্রী পরিষেবার উন্নতি ও সম্প্রসারণের দাবিতে বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, একাধিক গণ-ডেপুটেশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচির আয়োজন করে আহমদপুর কাটোয়া রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের রেল সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করে চলেছেন।

Advertisements

সকালে প্রথম ডেপুটেশন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় জ্ঞানদাস কান্দরা স্টেশনে সকাল ১০টায় এবং দ্বিতীয়টি হয় কীর্ণাহার স্টেশনে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে। দুই ক্ষেত্রেই স্থানীয় মানুষজন, নিত্যযাত্রী, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীরা বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, আহমদপুর–কাটোয়া শাখার রেল পরিষেবা অত্যন্ত সীমিত ও অনিয়মিত। প্রতিদিন বহু মানুষ এই রেলপথে যাতায়াত করেন, কিন্তু যথাযথ ট্রেন পরিষেবা না থাকায় তাঁদের নানান সমস্যার মুখে পড়তে হয়। এমনকি, অনেক সময় জরুরি চিকিৎসা বা অফিসযাত্রার ক্ষেত্রেও বড় অসুবিধার সম্মুখীন হন যাত্রীরা।

ডেপুটেশনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরা হয়— আহমদপুর–লাভপুর–কাটোয়া রুটের প্রতিটি স্টেশনে ২৪ ঘণ্টা রেলকর্মী ও স্টাফ নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক স্টেশনে রাতে কোনও কর্মী থাকেন না, যার ফলে নিরাপত্তার অভাব এবং পরিষেবার বিঘ্ন ঘটে। রেলকর্মী থাকলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে এবং যাত্রী নিরাপত্তা বাড়বে।

‘মা ফুল্লরা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার’ নামে একটি নতুন ট্রেন চালু করা হোক, যা পাকুড়, রামপুরহাট বা আহমদপুর থেকে ভোরবেলায় ছেড়ে লাভপুর, কীর্ণাহার, কাটোয়া, ব্যান্ডেল হয়ে হাওড়া যাবে এবং সন্ধ্যায় একই পথে ফিরে আসবে।

প্রস্তাবিত সময়সূচি অনুযায়ী, পাকুড় থেকে সকাল ৩:৪৫, রামপুরহাট থেকে ৪:৪৫, আহমদপুর থেকে ৫:৩৫ এবং কাটোয়া থেকে ৬:৩০-এ যাত্রা শুরু করবে এই ট্রেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই ট্রেন চালু হলে কর্মজীবী মানুষ এবং হাওড়া-কলকাতাগামী যাত্রীদের জন্য বড় স্বস্তি মিলবে।

Advertisements

হাওড়া–বর্ধমান–রামপুরহাট মেইন লাইনে অতিরিক্ত ট্রেন চলাচলের কারণে যে ট্রাফিক জ্যাম, বিলম্ব ও দুর্ঘটনা ঘটে, তা এড়াতে কিছু দূরপাল্লার ট্রেন, বিশেষত ১৩০৫৩/১৩০৫৪ কুলিক এক্সপ্রেসকে আহমদপুর–লাভপুর–কাটোয়া–ব্যান্ডেল রুটে চালানোর দাবি জানানো হয়েছে। এতে মেইন লাইনের চাপ কমবে এবং বিকল্প রুট হিসেবে এই শাখার ব্যবহার বাড়বে।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, “এই রেলপথে যাত্রীদের অসুবিধা প্রতিদিন বাড়ছে। পূর্ব রেল প্রশাসনের কাছে আমরা অনুরোধ করছি, যেন দ্রুত এই দাবিগুলির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”

অন্যদিকে, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ছাত্রছাত্রীরাও জানান, রেল পরিষেবার উন্নতি হলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও শিক্ষাক্ষেত্র উভয়ই উপকৃত হবে। আহমদপুর-কাটোয়া রেলপথের উন্নয়ন মানে সমগ্র বীরভূম ও নদিয়া জেলার এক নতুন সংযোগ সেতু তৈরি।

রেল সূত্রে জানা গেছে, এই দাবিগুলি পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে এবং তা পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের এই দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন এবং দ্রুত উন্নত রেল পরিষেবা নিশ্চিত করবেন।