সুন্দরবন: ভারত-বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত উত্তেজনার আবহে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে উপকূলবর্তী সুন্দরবন অঞ্চল। ভারতীয় জলসীমা লঙ্ঘন করার অভিযোগে বঙ্গোপসাগর থেকে একটি বাংলাদেশের মাছ ধরার ট্রলারকে (Bangladesh trawler) আটক করেছে ভারতীয় উপকূল রক্ষীবাহিনী।
ট্রলারটিতে থাকা ২৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আটক করার পর ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর পুরো এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
উপকূল রক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের নির্দিষ্ট টহল এলাকায় তারা একটি সন্দেহভাজন ট্রলার দেখতে পান। ট্রলারটির গতিবিধি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় জওয়ানরা কাছে গিয়ে পরীক্ষা করেন। তাতেই জানা যায়, এটি বাংলাদেশের একটি মাছ ধরার ট্রলার। জওয়ানরা ট্রলারের নথিপত্র খতিয়ে দেখে জানতে পারেন, ট্রলারটির ভারতীয় জলে প্রবেশের কোনও বৈধ অনুমতি নেই। এরপরই ট্রলারসহ ২৯ জন মৎস্যজীবীকে আটক করা হয়।
ভারতীয় জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য সুন্দরবন পুলিশ জেলার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটক হওয়া ২৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে সোমবার কাকদ্বীপ মহকুমা আদালতে পেশ করা হবে। কীভাবে এই ট্রলারটি ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করল, আদৌ কোনও প্রযুক্তিগত ভুল ছিল, নাকি এর পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য এই বিষয়গুলোই তদন্তের প্রধান অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এক ভারতীয় মৎস্যজীবীর রহস্যজনক মৃত্যুর পর থেকেই উপকূলবর্তী এলাকায় নজরদারি আরও কঠোর করেছে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী। টহল বাড়ানো হয়েছে এবং সন্দেহজনক কোনও গতিবিধি দেখলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি ট্রলার আটক হওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে প্রশাসন।
স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনও এ ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেছেন, “বাংলাদেশের একটি ট্রলার কীভাবে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ল, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত। উপকূল রক্ষী বাহিনী অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে ২৯ জনকে আটক করে ফ্রেজারগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে।”
তিনি আরও জানান, “সমুদ্রসীমা লঙ্ঘনের এমন ঘটনা মাঝে মাঝেই শোনা যায়। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা জরুরি। ভারতীয় মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।”
অন্যদিকে, আটকের পর বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা দাবি করেছেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে বা নেভিগেশন সিস্টেমের ত্রুটির জন্যই তারা অজান্তে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়েন। তবে প্রশাসন তাদের দাবি মানতে রাজি নয়। তদন্তে কোনও গাফিলতি না রাখার আশ্বাস দিয়েছে সুন্দরবন পুলিশ জেলা।
এই অনুপ্রবেশ আদৌ ‘ভুলবশত’ নাকি এর পেছনে আরও কোনও উদ্দেশ্য আছে এই প্রশ্নই এখন তদন্তের কেন্দ্রে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রুখতে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী নজরদারি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


