হিন্দুত্ব বিতর্কে শুভেন্দুকে তীব্র আক্রমণ শিউলির

মঙ্গলবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে একটি বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী তথা কেশপুরের বিধায়িকা শিউলি সাহা (Shiuli Saha) ২০২৬ সালের বিধানসভা…

Shiuli Saha, Shuvendu Adhikari, TMC vs BJP, West Bengal Politics

মঙ্গলবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে একটি বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠকে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী তথা কেশপুরের বিধায়িকা শিউলি সাহা (Shiuli Saha) ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কেশপুর সব সময় ভোটের জন্য প্রস্তুত। যে কোনও সময় নির্বাচন ঘোষিত হলেই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা পূর্ণ শক্তি নিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। “একদিনের বিজ্ঞপ্তিতে আমি কর্মী বৈঠক ডেকেছি, আর তাতেই কয়েকশো কর্মী উপস্থিত হয়ে গেছে। এটাই কেশপুরের তৃণমূলের শক্তি,” বলেন শিউলি। এই বৈঠকে তিনি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক ঘটনা ও মন্তব্য নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন।

Also Read | পার্টি অফিস ভাঙচুরের হুমকি! ঘাটালে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে

   

সম্প্রতি হাওড়ায় শুভেন্দু অধিকারী রক্তাক্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এই প্রসঙ্গে শিউলি সাহা বলেন, “উনি নিজেই চাইছেন রক্তাক্ত হতে। যখন উনি হাত দেখাচ্ছিলেন, তখন কোথাও উনার হাতে কাঁটা হয়েছে এমন দেখা যায়নি। নিজেই গাড়িতে ঘষে নিয়ে তিনি দেখাচ্ছেন, ‘এই দেখো, আমাকে পুলিশ আঁচড়ে দিয়েছে, কামড়ে দিয়েছে।’” তিনি আরও অভিযোগ করেন, শুভেন্দু গাড়ি থেকে নেমেই বলছেন, “হিন্দু ভাইরা ভালো আছো? আমি হিন্দুদের বাঁচাতে এসেছি।” এই মন্তব্যের জবাবে শিউলি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “এটা রবীন্দ্রনাথের বাংলা, নজরুলের বাংলা। উনি বলছেন, আমি হিন্দু দেব-দেবীদের বাঁচাতে এসেছি। তাহলে কি উনি একাই হিন্দু? আমরা হিন্দু নই? এসব লজ্জার কথা!”

Advertisements

শুভেন্দু অধিকারী, যিনি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অন্যতম প্রধান মুখ, প্রায়ই তাঁর বক্তব্যে হিন্দুত্বের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। হাওড়ার ঘটনায় তিনি দাবি করেছেন যে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনি আহত হয়েছেন। তবে শিউলি সাহার বক্তব্যে এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, “এটা নাটক ছাড়া কিছুই নয়। শুভেন্দুবাবু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে এই ধরনের কাজ করছেন।” তৃণমূল নেত্রী আরও জানান, শুভেন্দুর এই মন্তব্য বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

Also Read | CPM to TMC: বিধায়কের সড়ক শিলান্যাসে গিয়ে সিপিএম কর্মীর তৃণমূলে যোগ

কেশপুরের এই বৈঠকে শিউলি সাহা তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তির উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে কেশপুর তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে থাকবে। আমাদের কর্মীরা সব সময় প্রস্তুত।” তিনি দাবি করেন, রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস আবারও ক্ষমতায় ফিরবে। “আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। মানুষ আমাদের উপর ভরসা রাখে,” বলেন তিনি।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কেশপুর থেকে শিউলি সাহা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, এই এলাকায় তৃণমূলের জনসমর্থন অটুট রয়েছে। “একদিনের নোটিশে এত কর্মী যদি জড়ো হতে পারে, তাহলে ভোটের সময় আমাদের শক্তি কতটা বাড়বে, তা সহজেই অনুমান করা যায়,” বলেন তিনি।

শিউলি সাহার এই বক্তব্যের পর রাজ্য রাজনীতিতে তরজা আরও তীব্র হয়েছে। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে বাকযুদ্ধ নতুন নয়। শুভেন্দু অধিকারী ২০২০ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং ২০২১ সালে নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে বিরোধী দলনেতা হয়েছেন। তিনি প্রায়ই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন এবং হিন্দু ভোটকে একত্রিত করার চেষ্টা করেন। তবে শিউলি সাহার মতে, এই ধরনের মন্তব্য বাংলার জনগণের মনে জায়গা করে নিতে পারবে না।

“এটা রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলা। এখানে সবাই একসঙ্গে বাস করে। শুভেন্দুবাবুর এই ধরনের কথা বলা লজ্জার,” বলেন শিউলি। তিনি আরও জানান, তৃণমূল সরকার সব সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করে এবং বাংলার এই ঐতিহ্য বজায় রাখবে।

কেশপুরের এই বৈঠক ও শিউলি সাহার বক্তব্য ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে তৃণমূলের প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র সমালোচনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে এই ঘটনা বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে আরও সংঘাতের কারণ হতে পারে। কেশপুরের তৃণমূল কর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি এবং শিউলি সাহার নেতৃত্ব কীভাবে ২০২৬-এ প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, রাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।