হিন্দু দেবতাদের ছবি বিকৃতি, কাঠগড়ায় বাংলাপক্ষের বহিস্কৃত শক্তিরূপা

২০২৫ সালের ১৯ জুন, পশ্চিমবঙ্গের এক তরুণী শক্তিরূপা সাধুখাঁ নামে একজন ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে একটি বিতর্কিত ছবি (Hindu Deity Images) পোস্ট করেন, যা হিন্দু ধর্মের…

Hindu Deity Images

২০২৫ সালের ১৯ জুন, পশ্চিমবঙ্গের এক তরুণী শক্তিরূপা সাধুখাঁ নামে একজন ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে একটি বিতর্কিত ছবি (Hindu Deity Images) পোস্ট করেন, যা হিন্দু ধর্মের প্রিয় দেবতা প্রভু শ্রীরামের একটি সম্মানিত চিত্রের সাথে মানুষের মুখ যোগ করে সম্পাদনা করা হয়েছে। এই পোস্টটি দ্রুত হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রোধের ঝড় তুলে দেয়, এবং শীঘ্রই এটি সামাজিক মাধ্যমে বিরোধের কেন্দ্রে পরিণত হয়। হিন্দু ভয়েস নামক একটি সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শক্তিরূপা এই ছবিটি ইচ্ছাকৃতভাবে পোস্ট করেছেন, যার উদ্দেশ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সংবেদনাকে আঘাত করা। এই ঘটনার পরে তিনি ছবিটি মুছে ফেলেন, তবে ততক্ষণে এটি বিস্তৃত আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

Read Hindi: हिंदू देवताओं की तस्वीरों का अपमान, बंगला पक्ष की शक्तिरूपा पर कार्रवाई की मांग

   

আইনি পদক্ষেপের দাবি
হিন্দু ভয়েসের পোস্টে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে শক্তিরূপা সাধুখাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের দাবি হলো, তিনি ২০২৪ সাল থেকে হিন্দু দেবদেবীদের ছবি সম্পাদনা করে এই ধরনের অপমানজনক কাজ চালিয়ে আসছেন, যার একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো বাবা লোকনাথের ছবি বিকৃত করা। তাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, কারণ তিনি ‘বাংলাপক্ষ’ নামক একটি সংগঠনের সদস্য। ফলে, তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে যে উত্তরপ্রদেশের নাগরিকরা তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে পারেন। এছাড়া, শ্রীরাম তীর্থ নামক একটি সংস্থাকেও এই মামলায় অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বাংলাপক্ষের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পরে বাংলাপক্ষের নেতা কৌশিক মাইতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, শক্তিরূপা সাধুখাঁ গত দুই বছর ধরে বাংলাপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত নন। তাঁকে বিভিন্ন সংগঠন-বিরোধী কাজ এবং অন্যান্য কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বিবৃতি থেকে স্পষ্ট হয় যে, শক্তিরূপার এই কাজটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা হতে পারে, এবং এটি বাংলাপক্ষের আনুষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়। বাংলাপক্ষ একটি বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন, যা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণে কাজ করে, তবে ধর্মীয় সংবেদনশীলতার উপর এই ধরনের আক্রমণের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও আইনি জটিলতা
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা চলছে। অনেকে শক্তিরূপার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন, যেমন তাকে জেলে পাঠানোর জন্য আইনি পদক্ষেপের আহ্বান। তবে, এই ধরনের মামলা উত্তরপ্রদেশে দায়ের করার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের ফৌজদারি কার্যবিধি সংহিতা (সেকশন ১৭৭-১৭৮) অনুযায়ী, যদি কোনো অপরাধ জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা ভাঙার কারণ হয়, তবে তা বিভিন্ন রাজ্যে মামলা দায়ের করা সম্ভব। তবে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ২০২৩ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্মীয় অপরাধের মামলার ৬৫% কেস অমীমাংসিত থাকে, যা এই মামলার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

Advertisements

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিষয়ে ভারতীয় আইনের অধীনে সেকশন ২৯৫এ অনুযায়ী, যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মীয় আবেগকে আঘাত করার জন্য শব্দ, চিত্র বা অন্য কোনো উপায়ে অপমান করলে তাকে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। ২০২১ সালে কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকির মতো কিছু ব্যক্তি হিন্দু দেবদেবীদের অপমানের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যা এই ধরনের ঘটনার প্রতি সমাজের সংবেদনশীলতাকে প্রকাশ করে। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, শক্তিরূপার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের চাপ বাড়তে পারে, তবে রাজ্যাধীনতা ও প্রমাণ সংগ্রহের জটিলতা এটিকে জটিল করে তুলতে পারে।

সমাজের দ্বিধা ও ভবিষ্যৎ
এই ঘটনা সমাজে একটি গভীর দ্বিধা তৈরি করেছে। একদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা ধর্মীয় প্রতীকের প্রতি সম্মানের দাবি জানাচ্ছেন, অন্যদিকে বাংলাপক্ষের মতো সংগঠনগুলো এই ধরনের কাজকে ব্যক্তিগত উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। এই বিতর্ক থেকে উঠে আসা প্রশ্ন হলো, সামাজিক মাধ্যমে অভিব্যক্তির স্বাধীনতা কতটা বিস্তৃত হতে পারে এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতার সীমানা কোথায় শেষ হয়। এই ঘটনার ফলাফল ভারতীয় আইন ও সামাজিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

শক্তিরূপা সাধুখাঁর বিতর্কিত পোস্ট একটি বড় ধর্মীয় ও সামাজিক বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। যদিও তিনি এখন বাংলাপক্ষের সঙ্গে যুক্ত নন, তবুও তাঁর পূর্ববর্তী কাজগুলো তাঁর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে। উত্তরপ্রদেশে এফআইআরের দাবি বাস্তবায়ন হবে কি না, তা সময়ের উপর নির্ভর করছে। এই ঘটনা ভারতের বৈচিত্র্যময় সমাজে ধর্ম ও সংস্কৃতির সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।