Chandrayaan-3: মিশন চন্দ্রায়নে ‘বাংলা মিডিয়ামে’র জয়জয়কার

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। চন্দ্রযান-৩ এর বিক্রম ল্যান্ডার সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে।

অনুজ নন্দী, পীযূষকান্তি পট্টনায়ক

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। চন্দ্রযান-৩ এর বিক্রম ল্যান্ডার সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে। চাঁদের এই অংশে অবতরণকারী ভারত বিশ্বের প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে, প্রজ্ঞান রোভার সফলভাবে অবতরণ করার প্রায় দুই ঘন্টা পরে ল্যান্ডার থেকে বের হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে কাজ শুরু করেছে প্রজ্ঞান রোভার। ভারত ১৪ জুলাই চন্দ্রযান-৩ মিশন চালু করেছিল, প্রায় ৪১ দিনের যাত্রার পরে, এটি চাঁদে পৌঁছেছিল।

এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য হল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জলের সন্ধান করা, পাশাপাশি সেখানকার পৃষ্ঠের তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেগুলি সম্পর্কে গবেষণা করা। আর্থ জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩-এর প্রজ্ঞান রোভার সেখানে ১৪ দিন কাজ করবে এবং তার সমস্ত তথ্য পাঠাবে বিক্রম ল্যান্ডারে। এই তথ্য বিক্রম ল্যান্ডার থেকে চাঁদের কক্ষপথে চলমান প্রপালশন মডিউল পর্যন্ত পাওয়া যাবে এবং তারপর সেখান থেকে সমস্ত তথ্য ইসরো পাবে।

   

বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে অবতরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাকে ইসরো এবং ইসরোর বিজ্ঞানীদের দলকে অভিনন্দন জানান। যে বিজ্ঞানীদের কঠর পরিশ্রমে চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করল, সেই বিজ্ঞানীদের দলে রয়েছেন বাংলার ৭ জন। এই ৭ বাঙালির বিরাট অবদান রয়েছে চন্দ্রযান-৩ সফলের জন্য। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে কুশীলবেরারা রয়েছেন – বিজয় দাই, সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কৃষানু নন্দী, তুষারকান্তি দাস, অনুজ নন্দী, পীযূষকান্তি পট্টনায়ক এবং কৌশিক নাগ।

বিজয় দাইয়ের বাড়ি বীরভূমের মলারপুরের দক্ষিণগ্রামে। কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি-টেক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম-টেক। চন্দ্রযান-৩ এ ‘অপারেশন টিম’-এর সদস্য বিজয় দাই।

বীরভূমের সিউড়ির রায়পুরে বাড়ি সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি-টেক করেছেন। রিমোট সেন্সিং স্পেসক্র্যাফট মিশনে যুক্ত তিনি। এছাড়া সৌম্যজিৎ চন্দ্রযান-৩-এর অপারেশন ডিরেক্টর (মিশন সফটঅয়্যার)।

কৃষানু নন্দীর বাড়ি বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ডান্না-তে। আরসিসি ইনস্টিটিউট অফ অনফর্মেশন টেকনোলজি থেকে বি-টেক, এম-টেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। চাঁদে নামার পরে রোভার বা রোবট গাড়ির গতিবিধি সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা দলের সদস্য কৃষানু।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার বাসিন্দা তুষারকান্তি দাস। বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক। আইআইটি খড়গপুর ও আইএসএম ধানবাদে উচ্চতর শিক্ষা। চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পে যুক্ত তিনি।

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে বাড়ি অনুজ নন্দী। রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। পরে, এম টেক এনং পিএইচ ডি-ও করেছেন। চন্দ্রযান ৩- এর ‘ল্যান্ডার’কে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে যে ‘প্রোপালশন মডিউল পে-লোড’, তার গায়ে ‘স্পেকট্রো-পোলামেট্রি অব হ্যাবিটেবল প্ল্যানেতট আর্থ (সংক্ষেপে ‘শেপ’) নামে যন্ত্র নির্মানের দায়িত্বে অনুজ নন্দী।

পীযূষকান্তি পট্টনায়কের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তর কাটালে। কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক, খড়গপুর আইআইটি থেকে এম-টেক করেছেন। চন্দ্রুযান-৩ এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে রয়েছেন পীযূষকান্তি।

জলপাইগুড়ির কৌশিক নাগ জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। চন্দ্রযান-৩ এর সফটওয়্যার অপারেশনে যুক্ত তিনি।

ভারতের গুরুত্বপূর্ণ মিশন চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণাংশে পা রেখে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ভারত বিশ্বের প্রথম দেশ, যেটি চাঁদের এই অংশে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে, যখন এটি চাঁদে নরম অবতরণ করা চতুর্থ দেশ হয়ে উঠেছে। ভারতের আগে আমেরিকা, চিন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এসব বিস্ময়কর কাজ করেছে। চন্দ্রযান-৩-এর বিক্রম ল্যান্ডার অবতরণের পর প্রজ্ঞান রোভারও এখন চাঁদের পৃষ্ঠে হাঁটছে। বৃহস্পতিবার সকালে এসআরও জানিয়েছে যে প্রজ্ঞান রোভার কাজ শুরু করেছে, এটি এখন চাঁদের দক্ষিণ অংশে বিচরণ করছে। শিগগিরই এখান থেকে ছবিটিও মুক্তি পেতে পারে।

বুধবারই চাঁদে অবতরণের পর বিক্রম ল্যান্ডার তার ছবি পাঠিয়েছিলেন, যাতে চাঁদের পৃষ্ঠে বিক্রম ল্যান্ডারের পা দেখা যায়। ইসরো আগের দিনই চন্দ্রযান-৩-এর বিক্রম ল্যান্ডারের ছবি শেয়ার করেছিল, যেখানে চাঁদে বিক্রম ল্যান্ডারের পায়ের ছবি দেখা গিয়েছিল। এ ছাড়া বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ অংশের একটি ছবিও পাঠিয়েছিলেন, যা ছিল বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ISRO-এর এই সাফল্যে সারা দেশ যেমন উদযাপন করেছে, তেমনি আমেরিকা সহ বিশ্বের অন্যান্য বড় দেশের মহাকাশ সংস্থাগুলিও এর জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে।