মিলন পণ্ডা, এগরা: পিকনিক করতে এসে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বগুরান জলপাই গ্রাম। ষাঁড় চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিজেপি নেতা (BJP leader), স্কুলের শিক্ষাকর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ার মিলে গ্রামবাসীদের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর জখম তিন গ্রামবাসী। ঘটনায় বিজেপি নেতাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে জুনপুট উপকূল থানার মাজিলাপুট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বগুরান জলপাই গ্রামে। জানা গিয়েছে, এগরা এলাকা থেকে কয়েকজন বিজেপি নেতা ও কর্মী, সিভিক ভলেন্টিয়ার এবং স্কুলশিক্ষক মিলে সেখানে পিকনিক করতে যান। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামে ঢুকে পড়া কয়েকটি ষাঁড় স্থানীয় চাষিদের ফসল নষ্ট করতে শুরু করে। তখন গ্রামবাসীরা ষাঁড় তাড়াতে গেলে, বিজেপি নেতা-কর্মীরা উল্টে গ্রামবাসীদের ষাঁড় চুরির অভিযোগে গালিগালাজ শুরু করে বলে অভিযোগ।
তর্কাতর্কি থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। অভিযোগ, বিজেপি কর্মীরা মদ্যপ অবস্থায় গ্রামবাসীদের উপর চড়াও হয়ে তিনজনকে বেধড়ক মারধর করে। গুরুতর আহতদের কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় বিজেপি নেতা ও পঞ্চায়েত সদস্য কনিষ্ক মাল, সিভিক ভলেন্টিয়ার বিশ্বজিৎ মাল, স্কুলশিক্ষক সঞ্জীব মাল, এবং স্থানীয় বিজেপি কর্মী দেবকুমার পাত্র, রাজু পাত্র, আশীষ মাল, ও সোমনাথ মাল—সহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার কাঁথি আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
জুনপুট উপকূল থানার ওসি কামার হাসিদ বলেন, “লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো ঘটনার ভিডিও ও সাক্ষ্য প্রমাণ যাচাই করা হচ্ছে।”
ঘটনা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা আমিন সোহেল বলেন, “গ্রামবাসীরা ষাঁড় তাড়াতে গেলে বিজেপি নেতা ও কর্মীরা মদ্যপ অবস্থায় গালিগালাজ করে ও হামলা চালায়। তিনজন গুরুতর আহত। আমরা কঠোরতম শাস্তি চাই।”
অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন যে এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। বিজেপি নেতা উমেশ প্রধান বলেন, “আমাদের কর্মীদের পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অভিযুক্তরা পিকনিকে এসে মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং আচমকাই গ্রামবাসীদের উপর চড়াও হন। ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ, পাশাপাশি এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।


