মিলন পণ্ডা, খেজুরি: খেজুরিতে মহরম উপলক্ষে নৃত্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দু’জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা চরমে। ঘটনার পরদিন শনিবার সকালে খেজুরি ও আশপাশের এলাকা কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। জাতীয় সড়ক ১১৬বি এবং একাধিক রাজ্য সড়কে বিজেপির নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভ ও পথ অবরোধ চলে (Road Blockade)।
বিজেপির খেজুরি বিধায়ক শান্তনু প্রামাণিক, কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সোমনাথ রায়, সহ-সভাপতি তাপস দলাই সহ অন্যান্য বিজেপি নেতৃত্বের উপস্থিতিতে হেঁড়িয়া বোগা রাজ্য সড়ক ও কাঁথি-নন্দকুমার জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। এর ফলে এক ঘণ্টারও বেশি সময় যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। পরে সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
গত শুক্রবার গভীর রাতে খেজুরি ২ ব্লকের পশ্চিম ভাঙ্গনমারি গ্রামে মহরম উপলক্ষে নৃত্য অনুষ্ঠান চলছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বা দেখতে গিয়েছিলেন পূর্ব ভাঙ্গনমারির বাসিন্দা সুজিত দাস (২৩) ও ঝাঁটিহারি গ্রামের সুধীর চন্দ্র পাইপ (৬৫)। রাত প্রায় ২টো নাগাদ দু’জনই আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকেন। স্থানীয়দের দাবি, অনুষ্ঠানস্থলের কাছাকাছি একটি হ্যালোজেন লাইট খুলে পড়ে তাঁদের ওপর, এবং সেই কারণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়।
তবে বিজেপি নেতৃত্ব এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলতে নারাজ। তাঁদের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, এবং অভিযুক্তরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুষ্কৃতী।
তাপস দলাই বলেন, “আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ভাই শুধু অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কিছু জিহাদি মনোভাবাপন্ন লোক তাঁদের ওপর হামলা চালায় ও খুন করে।” তাঁর দাবি, এই ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত, এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।
সোমনাথ রায় জানান, “আমাদের দু’জন সমর্থককে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। যতক্ষণ না দোষীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, আমাদের আন্দোলন চলবে।”
শনিবার সকালে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী খেজুরি পৌঁছে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সোমবার খেজুরিতে পূর্ণ বনধের ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু, এবং তিনি নিজে জনকা থেকে বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন বলে জানান।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে বলে জানানো হয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনাকে পুরোপুরি রাজনৈতিক চক্রান্ত বলেই দাবি করেছে। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সভাপতি পীযূষ কান্তি পণ্ডা বলেন, “এই মৃত্যু দুঃখজনক, তবে এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। বিজেপি ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে।”
দু’জন সাধারণ মানুষের রহস্যময় মৃত্যু ঘিরে খেজুরি জুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিজেপি একে হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিক্ষোভে নামলেও প্রশাসন এখনই কিছু বলছে না। তৃণমূল এই ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেই উড়িয়ে দিয়েছে। সোমবারের বনধ সফল হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।