SIR বিজেপির ব্যাকডোর পলিটিক্স NRC র সূচনা, দাবি ঋতব্রতর

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) একটি বেসরকারি সংস্থার মতো (Ritabrata) বিজেপির হয়ে কাজ করছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন সিপিআই(এম)-এর রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি…

Ritabrata opposes SIR in perliement

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) একটি বেসরকারি সংস্থার মতো (Ritabrata) বিজেপির হয়ে কাজ করছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন সিপিআই(এম)-এর রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছেন, মোদী সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশে নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) প্রক্রিয়া ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুতর হুমকি।

ঋতব্রতর মতে, এই প্রক্রিয়ার আড়ালে বিজেপি এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস) বাস্তবায়নের ‘ব্যাকডোর’ কৌশল চালাচ্ছে, যার উদ্দেশ্য প্রকৃত ভোটারদের বাদ দেওয়া এবং নাগরিকত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। তবে, তিনি জানিয়েছেন, বাংলার মানুষ এই ধরনের ‘কুটিল’ চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত।

   

এনআরসির ছদ্মবেশে এসআইআর২০২৫ সালের ৩০ জুলাই, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভায় এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন প্রক্রিয়া একটি ছদ্মবেশ। এর আসল উদ্দেশ্য প্রকৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া এবং এনআরসি বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করা।”

তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন কমিশনকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। ঋতব্রতর দাবি, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশেষ করে বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও দরিদ্র শ্রেণির ভোটারদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।তিনি আরও বলেন, “এসআইআর-এর নামে বিজেপি এনআরসি-র একটি প্রাথমিক রূপ তৈরি করছে।

এটি গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।” তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এই রিভিশন প্রক্রিয়ায় বাংলার মতো রাজ্যগুলোকে বিশেষভাবে টার্গেট করা হচ্ছে, যেখানে বিজেপি রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী নয়।

ঋতব্রত জানিয়েছেন, বাংলার মানুষ ইতিপূর্বেও এনআরসি এবং সিএএ (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট)-এর বিরুদ্ধে সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ২০১৯-২০২০ সালে, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলন তীব্র রূপ নিয়েছিল, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, “বাংলায় এনআরসি বা সিএএ কার্যকর হবে না।”

ঋতব্রত দাবি করেছেন, বাংলার মানুষ এবারও এই ‘ব্যাকডোর’ কৌশলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করবে। তিনি বলেন, “পার্লামেন্টে আমরা এই ইস্যুতে জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলার মানুষ রাস্তায় নেমে এই চক্রান্ত ব্যর্থ করবে।”

Advertisements

ঋতব্রতর এই অভিযোগের পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুতে বাম নেতার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি বাংলার ভোটারদের দমন করতে এনআরসি-র ছায়া তৈরি করছে। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।”

তবে, বিজেপি এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক প্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এসআইআর একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ভোটার তালিকা আপডেট করা হয়। এতে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। বিরোধীরা জনগণের মধ্যে ভয় ছড়াচ্ছে।” বাংলার বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়, এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।

তারা দাবি করেছে, এসআইআর-এর নামে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে।নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যনির্বাচন কমিশন এই অভিযোগের জবাবে বলেছে, এসআইআর একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ভোটার তালিকার ত্রুটি সংশোধন করা হয়। কমিশন জানিয়েছে, এটি কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা রাজ্যকে লক্ষ্য করে নয়।

তবে, ঋতব্রতর অভিযোগের পর বিরোধী দলগুলো দাবি করেছে, এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হোক।ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিস্ফোরক দাবি বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। এসআইআর-এর আড়ালে এনআরসি বাস্তবায়নের অভিযোগ সত্যি হলে, এটি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশি সন্দেহে পুলিশি হেনস্থা, মুখ্যমন্ত্রীর হেল্পলাইনেই রক্ষা পেলেন ১৬ পরিযায়ী শ্রমিক

বাংলার মানুষ, যারা ইতিপূর্বে এনআরসি-সিএএ-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, এবারও এই কৌশলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। পার্লামেন্ট থেকে রাস্তা, সর্বত্র এই ইস্যুতে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সরকার এই অভিযোগের জবাবে কী পদক্ষেপ নেয়।