মিলন পণ্ডা, দিঘা: বঙ্গোপসাগরে একের পর এক নিম্নচাপের জেরে বিপর্যস্ত দিঘার (Digha) উপকূলীয় মৎস্য শিল্প। উত্তাল সমুদ্র আর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলিকে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। এতে চরম সংকটে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা, ঋণের বোঝায় জর্জরিত ট্রলার মালিকরাও দাঁড়িয়েছেন দিশেহারা অবস্থায়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্তের ফলে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া ক্রমাগত অস্বাভাবিক। কখনও প্রবল বৃষ্টিপাত, কখনও উচ্চ জোয়ারের কারণে সমুদ্রে মাছ ধরতে নামা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ফলে বাধ্য হয়ে উপকূলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে প্রায় সমস্ত ট্রলার। যে ক’টি সাহস করে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছে, সেগুলিও মাঝপথেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে।
একজন ট্রলার মালিকের কথায়, “একের পর এক আবহাওয়া খারাপের কারণে আমরা প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়ছি। সমুদ্রে গিয়ে মাছ না পেয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে, কিন্তু ব্যাংকের ঋণ তো কমছে না। এখন পরিস্থিতি এমন যে অনেকেই হয়তো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।”
জেলেদের অবস্থাও একই রকম করুণ। এক স্থানীয় মৎস্যজীবীর দাবি, “এই বছরের শুরুতে মাছ একেবারেই পাওয়া যাচ্ছিল না। কিছুদিন আগে একটু মাছ ধরা শুরু হলেও, আবার নিম্নচাপের কারণে সমুদ্রে নামা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন হাতে কাজ নেই, সংসার চালানোই মুশকিল।”
প্রতি বছর এই সময়ে (অক্টোবর-নভেম্বর) দিঘা, শংকরপুর ও তাজপুর উপকূলে মাছ ধরার মৌসুম শুরু হয়। সামুদ্রিক মাছ যেমন ভেটকি, বোম্বিল, টোপসে, পার্সে ইত্যাদি তখন বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে মাছ ধরা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে বাজারে।
মাছের যোগান কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। দিঘার মাছ বাজারের এক পাইকার জানান, “যে মাছ কেজিপ্রতি ৩০০ টাকায় বিক্রি হত, এখন সেটা ৬০০ টাকা ছুঁইছুঁই। সরবরাহ এতটাই কম যে সকালে বাজারে আনা মাছ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে মৎস্য শিল্পে। তাঁরা সতর্ক করেছেন, আগামী শীতকালেও পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এই অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলেদের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে না নামার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের আশঙ্কা, আগামী এক সপ্তাহ সমুদ্র থাকবে অস্বাভাবিক উত্তাল।
সব মিলিয়ে দিঘার মৎস্য অর্থনীতি এখন এক গভীর সঙ্কটে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আয় শূন্যে এসে ঠেকেছে হাজার হাজার জেলে পরিবারের। অন্যদিকে ঋণের চাপ আর রক্ষণাবেক্ষণ খরচে নাভিশ্বাস উঠেছে ট্রলার মালিকদের। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে আগামী মৌসুমে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।