দুটি গাড়ির রেষারেষিতে প্রাণ গেল দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ার, রায়গঞ্জে অল্পের জন্য রক্ষা পেল আর এক শিশু

রায়গঞ্জে (Raiganj) মঙ্গলবার একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় (Accident) প্রাণ হারাল ৮ বছর বয়সী এক দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, হরিদাস বর্মণ। ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়কের দুধুন্ডা এলাকায়,…

রায়গঞ্জে (Raiganj) মঙ্গলবার একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় (Accident) প্রাণ হারাল ৮ বছর বয়সী এক দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র, হরিদাস বর্মণ। ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়কের দুধুন্ডা এলাকায়, যেখানে দুটি গাড়ি, একটি সিমেন্ট বোঝাই লরি এবং একটি ট্র্যাক্টর, একে অপরকে ওভারটেক করার চেষ্টা করতে গিয়ে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটায়। ট্র্যাক্টরটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই শিশুকে ধাক্কা মারে। এক শিশু ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়, অন্য শিশুটি অল্পের জন্য বেঁচে যায়।

হরিদাসের অকাল মৃত্যুঃ
মৃত শিশুর নাম হরিদাস বর্মণ, বয়স ৮ বছর। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সে প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। তার সঙ্গে ছিল তার সহপাঠী, যিনি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে গেছেন। দুর্ঘটনার সময় হরিদাস এবং তার সহপাঠী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সিমেন্ট বোঝাই একটি লরি এবং একটি ট্র্যাক্টর একে অপরকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল, এবং ট্র্যাক্টরটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই শিশুকে ধাক্কা মারে।

   

ঘটনার পর, হরিদাস ঘটনাস্থলেই গুরুতর আহত হয়ে মারা যায়। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্য শিশুটি যদিও আহত হয়েছিল, কিন্তু তার আঘাত গুরুতর না হওয়ায় সে বেঁচে যায়।

দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণঃ
স্থানীয়দের দাবি, রাজ্য সড়কের উপরে দাঁড়িয়ে ছিল হরিদাস এবং তার সহপাঠী। এ সময় সিমেন্ট বোঝাই লরি ট্র্যাক্টরটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্র্যাক্টরটির গতি বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে, ট্র্যাক্টরটি রাস্তার পাশে চলে গিয়ে দুটি শিশুকে ধাক্কা মারে। ধাক্কায় হরিদাস মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় মারা যায়। অন্য শিশুটিও ছিটকে পড়লেও তার আঘাত গুরুতর ছিল না।

পুলিশের পদক্ষেপ ও ঘটনার তদন্তঃ
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় এবং দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত ঘাতক লরি এবং ট্র্যাক্টরটি আটক করা হয়েছে। পুলিশ দুর্ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

এই দুর্ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হরিদাসের পরিবারের সদস্যরা তার অকাল মৃত্যুর ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, হরিদাস ছিল অত্যন্ত মেধাবী, শান্ত স্বভাবের এবং পড়াশোনায় অনেক ভালো। তারা হতাশ এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, হরিদাসের মৃত্যু শুধু তার পরিবারই নয়, পুরো গ্রামকেই শোকাহত করেছে।

এছাড়া, স্থানীয়দের দাবি, রাজ্য সড়কে অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে অন্য কোনও পরিবার এভাবে তাদের সন্তানকে হারিয়ে না ফেলে। অনেকেই সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য এখানে টিআরপির (ট্রাফিক রেগুলেটরি পয়েন্ট) ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার এবং প্রয়োজনে পুলিশ প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।

এই দুর্ঘটনার পরে রাজ্য সরকারের কাছে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। বিশেষ করে, স্কুল যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। শিশুদের জন্য নিরাপদ সড়ক পরিবহন নিশ্চিত করা সরকারের প্রথম দায়িত্ব হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে শিশুরা রক্ষা পায়।

এছাড়া, সড়ক নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যাতে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যায়। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য স্কুল গেটের কাছেও নিরাপত্তার বিধান যেমন চালু করা দরকার, তেমনি প্রত্যেক অঞ্চলের সড়কগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং সংশোধন করা উচিত।