পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা, ৭৮ কোটি টাকার লেনদেন! মধ্যমণি ‘কাকু’, চার্জশিট CBI-এর

কলকাতা: সম্প্রতি রাজ্যে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে৷ ওই চার্জশিটে চারজন এজেন্টের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা প্রার্থীদের কাছ…

Sujay Krishna Bhadra

short-samachar

কলকাতা: সম্প্রতি রাজ্যে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে৷ ওই চার্জশিটে চারজন এজেন্টের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন। এজেন্টদের মধ্যে মূলত শেখ আব্দুল সালাম, বকুল বিশ্বাস, রৌসন আলম এবং তৃস্তান মান্নার নাম উঠে এসেছে৷ সিবিআইয়ের দাবি, এজেন্টরা ঘুষের টাকার হিসাব বিস্তারিতভাবে ১০টি ডায়েরিতে লিখে রাখতেন, যা তদন্তকারী সংস্থার হাতে এসেছে৷ 

   

এই ঘুষের লেনদেনের মূল নায়ক ছিলেন অরুণ কুমার হাজরা এবং সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু৷ চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে তাঁরা টাকা তুলে অরুণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হত৷ সেখান থেকে টাকা যেত সুজয়কৃষ্ণের হাতে। প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে বেশিরভাগ টাকা অরুণ এবং সুজয়কৃষ্ণের মাধ্যমে হাত বদল হয়েছে। লেনদেনের স্থান ছিল বেহালা উত্তরসূরি ক্লাব, ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ অফিস এবং সুজয়কৃষ্ণের নিজস্ব বাড়ি।

তবে, ঘুষ নেওয়ার পরও অধিকাংশ প্রার্থী চাকরি পাননি। এ বিষয়ে সিবিআই তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, চাকরিপ্রার্থীরা ঘুষের টাকা ফেরত পেতে একাধিক বার অরুণ ও সুজয়কৃষ্ণের কাছে আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তাঁরা টাকা ফেরত না দিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যান। এমনকি, প্রমাণ লোপাটের জন্য প্রার্থীদের মোবাইল ফোনে থাকা যাবতীয় তথ্য মুছে ফেলা হয়। সালাম এবং বকুলের মতো এজেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া বয়ানে জানা গেছে, সুজয়কৃষ্ণের নির্দেশে তারা বেশ কয়েকটি মোবাইল ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি নানা নথি মুছে ফেলেন।

এদিকে, সাদা খাতা জমা দিয়েও পরীক্ষায় পাশ করা কিছু প্রার্থীর ক্ষেত্রে ঘটনার একটি আশ্চর্যজনক রূপ প্রকাশ পেয়েছে। এক প্রার্থী, যাঁর স্ত্রীর জন্য চাকরি চাওয়া হয়েছিল, সাদা খাতা জমা দেওয়ার পরেও ১২৫ নম্বর পেয়েছিলেন। এই ঘটনা প্রার্থীদের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলে, যার ফলে তারা ঘুষের টাকা জমা দিতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন।

ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য একাধিক বার সুজয়কৃষ্ণের কাছে গিয়েছিলেন সালাম, বকুল, রৌসন ও তৃস্তান। তবে সুজয়কৃষ্ণ তাঁদের ফিরিয়ে দেন এবং “না-চেনার” ভান করেন। এই ঘটনায় সিবিআই সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করলেও তিনি বর্তমানে অন্তর্বর্তী জামিনে রয়েছেন।

সিবিআইয়ের তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিটে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও এসেছে। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও সরাসরি অভিযোগ নেই, তিনি এই তদন্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। তবে সিবিআই তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে এবং ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে।