সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে ভারত: অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব

নয়াদিল্লি: পহেলগাঁওয়ের নির্মম জঙ্গি হামলার জবাবে বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে সুনির্দিষ্ট হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এই প্রত্যাঘাতে অন্তত ৯টি…

press conference on operation sindoor

নয়াদিল্লি: পহেলগাঁওয়ের নির্মম জঙ্গি হামলার জবাবে বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে সুনির্দিষ্ট হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এই প্রত্যাঘাতে অন্তত ৯টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর। পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও হামলার সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, যা ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক কৌশলের তাৎপর্য আরও বাড়িয়ে দেয়।

বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী সাংবাদিক বৈঠকে জানান, “২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পর পহেলগাঁওয়ের ঘটনা সবচেয়ে বড় ও বর্বর জঙ্গি হামলা। যেখানে পর্যটকদের পরিবারগুলিকে টার্গেট করে বেছে বেছে পুরুষদের মাথায় গুলি করা হয়েছে। এটা শুধু রক্তক্ষয়ী হামলা নয়, কাশ্মীরের শান্তি ও উন্নয়নের উপর সরাসরি আঘাত।”

   

জঙ্গিদের শিকড়েই আঘাত: ৯ ঘাঁটি ধ্বংস
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে-সহ পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত জইশ-ই-মহম্মদ ও লস্কর-ই-তইবা ঘনিষ্ঠ জঙ্গি শিবিরগুলিকেই নিশানা করা হয়। এই সব ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র মজুত ও হামলার ছক সাজানোর প্রক্রিয়া চলছিল বলেই গোয়েন্দা তথ্য ছিল। সেই অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে একাধিক শিবিরকে কার্যত মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পুরনো হামলার স্মৃতি তুলে বার্তা বাহিনীর
এই অপারেশনের পর সেনা ও বিদেশমন্ত্রক ২০০১ সালের সংসদ হামলা ও ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার ফুটেজ ফের সামনে এনেছে। বাহিনী বোঝাতে চাইছে—এই একই শত্রুরাই, যারা বারবার ভারতের বুক রক্তাক্ত করেছে। এ বার তারা পেল পাল্টা জবাব।

বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী মঙ্গলবার বলেন, “পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসবাদে সক্রিয়ভাবে মদত দিয়ে আসছে। জেনেশুনেই তাদের ভূখণ্ডে জঙ্গিদের লুকিয়ে রাখা হয়, তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়। পহেলগাঁও হামলার পরে গোটা দেশে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ভারত সরকার প্রাথমিকভাবে কিছু কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু, পহেলগাঁওয়ের মতো নির্মম ঘটনার পর ন্যায়বিচার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত ওই হামলার সঙ্গে জঙ্গিদের কোনও সংযোগ থাকার কথা অস্বীকার করছে। অথচ আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর ছিল, ভবিষ্যতেও ভারতের বিরুদ্ধে বড়সড় হামলার ছক কষা হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই এই সামরিক প্রতিআক্রমণ অপরিহার্য হয়ে ওঠে।”

বিক্রম মিস্রী স্পষ্ট করে জানান, “ভারত কেবল নিজের আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদের পরিকাঠামো—যে নেটওয়ার্ক পাকিস্তানের মাটিতে নিরাপদে ছায়া বিস্তার করছে, তারই শিকড়ে আঘাত হানা হয়েছে।”

রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “গত ২৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপুঞ্জ পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছিল, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের এই প্রতিআক্রমণ আন্তর্জাতিক সেই বার্তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি শুধুই প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা।”

পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি সংগঠনগুলির ঘাঁটিতে কীভাবে নিশানা করে হামলা চালানো হয়েছে, সেই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করলেন ভারতীয় বায়ুসেনার কর্নেল সোফিয়া ও উইং কমান্ডার ভূমিকা। তাঁরা জানান, মোট ৯টি জঙ্গিঘাঁটিকে সুনির্দিষ্টভাবে টার্গেট করা হয়েছিল, এবং প্রতিটি লক্ষ্য সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।

তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে, “দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে আসছে। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে হামলার ছক কষা হচ্ছিল এই ঘাঁটিগুলিতে। তাই এদের নিশানা করেই অভিযান চালানো হয়।”

জঙ্গিঘাঁটির তালিকা তুলে ধরলেন সামরিক আধিকারিকেরা
কর্নেল সোফিয়া ও উইং কমান্ডার ভূমিকা জানান, পাকিস্তানে যেসব জঙ্গিঘাঁটিতে হামলা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল:

শুভান আল্লাহ মসজিদ (পাক-অধিকৃত কাশ্মীর): এখানে লস্কর-ই-তইবা-র প্রধান প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং অস্ত্র মজুত রাখা হতো।

বিলাল মসজিদ (পাঞ্জাব প্রদেশ): জইশ-ই-মহম্মদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণশিবির।

কোটলি মসজিদ (পিওকে): এটি লস্করের সক্রিয় ঘাঁটি, যা জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ সেক্টরে হামলার পরিকল্পনায় ব্যবহৃত হতো।

সোফিয়া ও ভূমিকা জানান, এই সমস্ত ঘাঁটি বহুদিন ধরেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে ছিল। হামলার আগেই প্রতিটি জায়গার উপর নজরদারি চালানো হয় এবং নিশানায় নিখুঁতভাবে আঘাত হানা হয়।

সেনা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অভিযানের আগে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ড্রোন ও উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কোনও বেসামরিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করেই এই নিশানা বেছে নেওয়া হয়েছিল।

Advertisements