Mangroves in Sundarbans: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ধ্বংসে বিপর্যস্ত বিশ্ববাসী

অপরিকল্পিত পরিকল্পনা ও প্রকৃতির উপর মানুষের অতি খবরদারি আর পরিবেশ সম্পর্কে সরকারের উদাসীনতায় ক্রমাগত ছোট হচ্ছে সুন্দরবন (Sundarbans)। বারবার অভিযোগ উঠে আসছে উপকূল রক্ষায় প্রশাসনের…

Mangroves in Sundarbans

অপরিকল্পিত পরিকল্পনা ও প্রকৃতির উপর মানুষের অতি খবরদারি আর পরিবেশ সম্পর্কে সরকারের উদাসীনতায় ক্রমাগত ছোট হচ্ছে সুন্দরবন (Sundarbans)। বারবার অভিযোগ উঠে আসছে উপকূল রক্ষায় প্রশাসনের নেই তেমন নজর। এছাড়াও সুন্দরবনে ‘কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট’-এর নিয়মকানুনও মানা হচ্ছে না কোনো ভাবেই। সরকারের একটা পরিবেশ দপ্তর যে বর্তমান তা বোঝার উপায় রাখেনা। সমগ্র সুন্দরবন জুড়ে গঙ্গাসাগর, ঘোড়ামারা, মৌসুনি, নামখানা, জি প্লটের মতো জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ রয়েছে এখানে। এ ছাড়াও ধনচি, ডালহৌসি, বুলচেরি, বঙ্গদুনি, জম্বুদ্বীপের মতো জঙ্গলে ঢাকা দ্বীপ এলাকাও বর্তমান। জনঘনত্ব ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। তার কারণেই মানুষও বাড়িয়ে নিচ্ছে নিজেদের বসবাসযোগ্য এলাকা। আর রাজনৈতিক বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে মুখবন্ধ করে আছে সরকার।

সম্প্রতি কিছু পরিবেশ বিজ্ঞানীর তৎপরতায় উপগ্রহ চিত্র পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, গত পাঁচ দশকে (১৯৭০-২০২০) এই দ্বীপগুলি প্রায় ১২৯ বর্গ কিলোমিটার জলের তলায় চলে গিয়েছে। জঙ্গলে ঢাকা দ্বীপ এলাকাগুলি এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৮০ বর্গ কিলোমিটার ছোট হয়েছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। বসতি দ্বীপগুলির ক্ষয় হয়েছে প্রায় ৪৯ বর্গ কিলোমিটার। ক্ষয়ে যাওয়া পলি জোয়ারের টানে ভেসে এসে নদীর খাতে জমে প্রায় ৯০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমিও জেগে উঠছে। আবার সাগরদ্বীপ সংলগ্ন লোহাচরা, বেডফোর্ড ও ল্যাসদ্বীপ তলিয়ে গিয়েছে। ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে ঘোড়ামারা দ্বীপ। ঘোড়ামারার কাছেই আবার হলদি নদীর মোহনায় জেগে উঠেছে নয়াচর নামে এক নতুন দ্বীপ। স্বাভাবিকভাবে এই ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়েই নিজেকে টিকিয়ে রাখছে প্রকৃতি । কিন্তু মানুষের অপব্যাবহারই এই অরণ্য ধ্বংসের অন্যতম কারণ বলেই মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একাংশ।

উপকূলের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বোল্ডার, পাথর, বলি,সিমেন্ট দিয়ে ভুমিক্ষয় রোধের একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা কাজে আসে নি। আইআইটি চেন্নাইয়ের বিশেষজ্ঞেরা সাগরদ্বীপকে রক্ষা করার জন্য জোয়ারের নিম্নসীমা থেকে ২০০ মিটার দক্ষিণে একটি প্রাচীর নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র সরকারের সহযোগিতা না মেলায় সেই কাজ বন্ধ আছে বলে অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তা। সূত্রের খবর, অন্য কিছু ভু-বিজ্ঞানী এই নীতিকে সমর্থন করে নি।

এই মুহূর্তে সাগরে কপিল মুনির আশ্রম বিপদের মুখে। সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে একটা বাঁধ দিয়ে কপিলমুনির আশ্রম রক্ষার পরিকল্পনা হলেও তা কার্যকরী হয়নি। সাগর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা এলাকায় একাধিক বেহাল নদীবাঁধ কংক্রিটের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সেই কাজও শেষ হয়নি। কোথাও আবার শুরুই হয়নি। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “উপকূল এলাকায় কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ম মানা হচ্ছে না। কলকাতা হাই কোর্ট এবং ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।” ব্যস, ওই পর্যন্তই!

আসল কথা সুন্দরবন ছোট হয়ে আসছে। এদিকে একাধিক ঝড়ে প্রচুর ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হয়ে। মানুষ নিজেদের স্বার্থে আরো ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করছে। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বছর খানেক আগে ঘোষণা করেছিলেন, উপকূলে এক কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে। তবে টেন্ডার,বরাত, টাকা খরচ সব হয়েছে, শুধু গাছ লাগানো হয় নি। এই সকল পরিস্থিতির কারণেই আজ বিশ্বসেরা ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের মুখে । যার মাসুল গুনতে হচ্ছে সমগ্র জীবকূলকে।