দীর্ঘ সময় ধরে ভুগতে থাকা এক রোগী, শারীরিক অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু, অবস্থা এতই সঙ্কটাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও, বেডের অভাবে সেই রোগীকে বাধ্য হয়ে ফেলে রাখা হয়েছে হাসপাতালের বাইরে। এই অবস্থা দেখা গেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে।
মুমূর্ষ রোগীটির কোনো চিকিৎসা বা ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি। পরিস্থিতি দেখে নীরব থাকলেও, অনেকেই অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালের কর্মীরা সব কিছু জানার পরেও চোখ বন্ধ করে রয়েছেন। এই ঘটনা একটি নৈতিক প্রশ্ন তুলছে, যেখানে চিকিৎসার অভাবে একজন মানুষের জীবন বিপদের দিকে চলে যাচ্ছে, অথচ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অভিযোগ, সিঁড়ির নিচে পড়ে থাকা রোগীটির পাশেই ছিল নোংরা কাপড় এবং চাদর। চিকিৎসা তো দূরের কথা, তাকে উপযুক্ত পরিবেশে রাখা হয়নি। একদিকে যখন রোগীর অবস্থা সংকটজনক, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার প্রতি কোনও মানবিক সহানুভূতি দেখায়নি বলে অভিযোগ। এতে এক ধরনের অমানবিকতা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এটি প্রথমবার নয় যে, বারুইপুর হাসপাতাল নিয়ে এমন অভিযোগ উঠল। এর আগেও হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে এক অসুস্থ পথচারীকে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। সেসময়ও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করেই তাকে হাসপাতালে বাইরে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তখন থেকেই এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং অভিযোগ জমতে শুরু করে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে এবং বিষয়টি জনসমক্ষে এসেছে।
হাসপাতালের ফ্যাকাল্টি ম্যানেজার শ্যামল চক্রবর্তী অবশ্য এই অভিযোগের বিরুদ্ধে সাফাই দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, “আমরা ওই রোগীকে ফেলে রাখিনি। তার পরিবার তাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল। তাদের কাছে থেকে তথ্য পেয়ে আমরা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং চিকিৎসা শুরু করেছি।” তবে, তিনি আগের ঘটনায় কোনো মৃত্যুর অভিযোগ থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন, “এমন কিছু জানি না।”
এদিকে, স্থানীয় এক বাসিন্দা প্রশান্ত রায় জানাচ্ছেন, “ওই মহিলাকে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় বসে থাকতে দেখেছি। তার শরীর একেবারে ভালো ছিল না। এখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসা তো দেয়া প্রয়োজন!” তবে হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের পরিজনদের সঙ্গেও কথা বললেও, কেউই ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননি।
এটি স্পষ্ট যে, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও গুরত্বপূর্ণ নিয়মাবলী এবং যথাযথ সেবা প্রদানে দীর্ঘদিন ধরে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। রোগীদের জন্য কোনো জরুরি ব্যবস্থা নিতে না পারলে, তাদের জীবন সংকটের দিকে চলে যেতে পারে, যা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে, রোগীদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হওয়া অত্যন্ত জরুরি।