শান্তনু পান, পশ্চিম মেদিনীপুর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের অন্তর্গত নলডিহি গ্রামে অবস্থিত খাসবাড় হাই স্কুলে সোমবার সকাল থেকেই তৈরি হয় চরম উত্তেজনা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবপ্রসাদ মিদ্যার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীরা (student)। স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই গেটের সামনে অস্থায়ী ছাউনি খাটিয়ে শুরু হয় এই গণবিক্ষোভ।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, মিড ডে মিল দুর্নীতি, স্কুলে আসা সরকারি সাইকেল চুরি, রান্না ঘরের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম উধাও, প্রধান শিক্ষকের দীর্ঘ অনুপস্থিতি—এ সবকিছু মিলিয়ে কমপক্ষে ১০টি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে দেবপ্রসাদ মিদ্যার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরে বহুবার লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনও কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি বলে দাবি করেছেন অভিভাবকরা।
কী কী অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে?
মিড ডে মিলে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন এবং বরাদ্দ অর্থের স্বচ্ছ হিসেব না থাকা
বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ সাইকেল চুরি
রান্নাঘরের সরঞ্জাম রহস্যজনকভাবে উধাও
প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে টাকা তোলার অভিযোগ
বিদ্যালয়ে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থাকা এবং স্কুল পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করা
ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষকের স্কুলে উপস্থিতি এতটাই অনিয়মিত যে ক্লাস চলাও প্রায় বন্ধের মুখে। অভিভাবকদের কথায়, “শুধু মিড ডে মিল নয়, স্কুল পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই চলছে চূড়ান্ত গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতা। এর ফলে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি।”
প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় ক্ষোভ
বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় কেশপুর বিডিও অফিস, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (DI) অফিস এবং জেলা শিক্ষা দফতরে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও, কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। তারই প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ অথচ দৃঢ় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, যতদিন না প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তদন্ত শুরু হচ্ছে, ততদিন তাঁরা স্কুল গেটে অবস্থান চালিয়ে যাবেন। ঘটনাস্থলে এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিক উপস্থিত হননি।
প্রধান শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া নেই
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক দেবপ্রসাদ মিদ্যার পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এলাকায় এই ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এই ঘটনার পর আবারও একবার প্রমাণিত হলো, পশ্চিমবঙ্গের বহু স্কুলে প্রশাসনিক নজরদারির অভাব এবং স্বচ্ছতার ঘাটতি কীভাবে শিক্ষার পরিবেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের কাছে প্রশ্ন উঠছে—একটি সরকারি স্কুলে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও কীভাবে এক প্রধান শিক্ষক দিনের পর দিন স্কুল এড়িয়ে যেতে পারেন, আর কেনই বা শিক্ষাপ্রশাসন এতদিন নিরব থাকল?