সম্প্রতি একটি সাম্প্রদায়িক পোস্টের জন্য ইনফ্লুয়েন্সার শর্মিষ্ঠা পানোলিকে গ্রেফতারের ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে (mamata)। এই ঘটনায় অন্ধ্রপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং জনসেনা নেতা পবন কল্যাণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(mamata)মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা একটি দ্বিমুখী পথ হওয়া উচিত।” এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ও মুক্ত মতপ্রকাশের সীমারেখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গ্রেফতারের পটভূমি
কলকাতা পুলিশ গত শুক্রবার (৩০ মে, ২০২৫) গুরুগ্রাম থেকে ২২ বছর বয়সী আইনের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা পানোলিকে গ্রেফতার করে। তিনি পুনের একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং সামাজিক মাধ্যমে একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে পরিচিত। শর্মিষ্ঠার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তিনি পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরের’-এর সময় বলিউড তারকাদের নীরবতার সমালোচনা করেছিলেন(mamata)।
এই হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছিল। ভিডিওটিতে তিনি ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল এবং আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ, যা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। কলকাতার গার্ডেন রিচ থানায় ১৫ মে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়।
এফআইআর-এ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (BNS) ধারা ১৯৬(১)(এ) (ধর্ম, জাতি, জন্মস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে শত্রুতা সৃষ্টি), ২৯৯ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত কাজ), ৩৫২ (শান্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত অপমান) এবং ৩৫৩(১)(সি) (জনমনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিবৃতি) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
শর্মিষ্ঠাকে গ্রেফতারের পর কলকাতার আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়, যেখানে তাকে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। তার আইনজীবী মোহাম্মদ সামিমুদ্দিন জামিনের আবেদন করেছেন, তবে আদালত তা খারিজ করে দেয়।
পবন কল্যাণের প্রতিক্রিয়া
জনসেনা নেতা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ এই গ্রেফতারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, শর্মিষ্ঠা তার ভুল স্বীকার করে ভিডিওটি মুছে ফেলেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা (mamata) যখন সনাতন ধর্মকে ‘গন্ধ ধর্ম’ বলে উপহাস করেন, তখন কোথায় থাকে এই কঠোরতা? তাদের ক্ষমা কোথায়? তাদের গ্রেফতার কোথায়?” তিনি আরও বলেন, “ধর্মনিন্দা সবসময় নিন্দনীয়, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা কারো জন্য ঢাল এবং কারো জন্য তলোয়ার হতে পারে না। এটি একটি দ্বিমুখী পথ হওয়া উচিত। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, দেশ তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার জন্য ন্যায়বিচার কর।”
During Operation Sindoor, Sharmistha, a law student, spoke out, her words regrettable and hurtful to some. She owned her mistake, deleted the video and apologized. The WB Police swiftly acted, taking action against Sharmistha.
But what about the deep, searing pain inflicted… pic.twitter.com/YBotf34YYe
— Pawan Kalyan (@PawanKalyan) May 31, 2025
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া (mamata)
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(mamata)বিজেপির সমালোচনা করে বলেছেন, তারা “বিভাজনকারী রাজনীতির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে।” তিনি বিজেপির ধর্মীয় মতাদর্শকে “গন্ধ ধর্ম” বলে কটাক্ষ করেন এবং বলেন, এটি হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নীতির পরিপন্থী। পবন কল্যাণ মমতার এই মন্তব্যের একটি ভিডিও শেয়ার করে তার সমালোচনা করেন।
কলকাতা পুলিশের বক্তব্য
কলকাতা পুলিশ সামাজিক মাধ্যমে শর্মিষ্ঠার গ্রেফতারকে “অবৈধ” বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা “ভুল এবং বিভ্রান্তিকর” বলে জানিয়েছে। তারা বলেছে, “সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। নোটিশ দেওয়ার সব চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি প্রতিবারই পলাতক ছিলেন। ফলস্বরূপ, একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যার ভিত্তিতে তাকে গুরুগ্রাম থেকে আইনত গ্রেফতার করা হয়।” পুলিশ সবাইকে “অযাচিত বা জল্পনামূলক বিষয়বস্তু ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে এবং নির্ভরযোগ্য উৎসের উপর নির্ভর করতে” অনুরোধ করেছে।
বিরোধীদলের প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীও শর্মিষ্ঠার গ্রেফতারের সমালোচনা করেছেন। তিনি পবন কল্যাণের পোস্ট শেয়ার করে তৃণমূল নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্য এবং হিন্দু দেবদেবীর প্রতি অবমাননার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী মিছিলে পাথর ছোঁড়ার সময় পুলিশের এই তৎপরতা কোথায় থাকে?”(mamata)
টেস্ট থেকে কোহলি বিদায়, এই ক্রিকেটারের ব্যাটে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত!
শর্মিষ্ঠার ক্ষমা
ভিডিওটি বিতর্কের সৃষ্টি করার পর শর্মিষ্ঠা তা মুছে ফেলেন এবং এক্স ও ইনস্টাগ্রামে একটি “নিঃশর্ত ক্ষমা” প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করা হয়েছিল এবং আমার উদ্দেশ্য কখনো কাউকে আঘাত করা ছিল না। যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি তার জন্য দুঃখিত। ভবিষ্যতে আমি আমার পোস্টে আরও সতর্ক থাকব।”
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। #ReleaseSharmistha এবং #ArrestSharmistha হ্যাশট্যাগ দুটি ট্রেন্ড করছে, যা জনমতের বিভক্ততা প্রতিফলিত করছে। কেউ কেউ শর্মিষ্ঠার মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে কথা বলছেন, অন্যরা তার মন্তব্যকে উস্কানিমূলক বলে মনে করছেন।
শর্মিষ্ঠা পানোলির গ্রেফতার ভারতে মুক্ত মতপ্রকাশ, ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এবং সামাজিক মাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণ নিয়ে একটি বৃহত্তর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আলিপুর আদালতের পরবর্তী শুনানি এই মামলার দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে। এই ঘটনা ভারতের ডিজিটাল স্পেসে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপর আইনি তদারকির প্রশ্ন তুলেছে।