পশ্চিম মেদিনীপুর: দক্ষিণবঙ্গে ফের বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক এলাকা জলমগ্ন। বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। ঘাটাল, চন্দ্রকোনা সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল ঢুকতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট, কৃষিজমি, বসতি— সবই এখন জলের তলায়। তার উপরে আশঙ্কার মেঘ আরও ঘন করেছে ডিভিসি (DVC)-র জলছাড়া।
শুক্রবার রাত থেকেই ডিভিসি দুর্গাপুর ব্যারাজ (Durgapur Barrage) থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে। শনিবার সকাল ৭টা থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৭০,৪৭৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে। ফলে রাজ্যের একাধিক নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ডিভিসি শনিবার কমলা সতর্কতা (Orange Alert) জারি করেছে।
জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বিহারে নিম্নচাপের (Low Pressure) জেরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডে এত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে যে ডিভিসি বাধ্য হয়েছে অতিরিক্ত জল ছাড়তে। সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত থেকেই ডিভিসি ৫৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়তে শুরু করেছিল। পরে তা বেড়ে ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। এই প্রবল জলছাড়ার ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পর একে একে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এদিকে, নদীগুলির জলস্তর দ্রুত বাড়ছে। কংসাবতী, শীলাবতী, রূপনারায়ণ, দামোদর নদ ইতিমধ্যেই বিপদসীমার কাছাকাছি। ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যসচিব ইতিমধ্যেই ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। সব জেলাশাসককে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
রাজ্য সড়কগুলি ডুবে যাওয়ায় বহু এলাকা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুর, খড়গপুর শহরের আশেপাশের বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন। বহু গ্রামে ঢুকে পড়েছে নদীর জল। শস্যের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বহু পরিবার ইতিমধ্যেই স্কুল, ক্লাবঘর কিংবা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছর বর্ষা এলেই এই দুর্দশার মুখে পড়তে হয়। ডিভিসি জল ছাড়লেই ঘাটাল সহ গোটা অঞ্চল জলমগ্ন হয়। দীর্ঘদিন ধরেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান (Ghatal Master Plan)-এর দাবি উঠলেও তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ।
বর্তমানে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা দক্ষিণবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে বন্যার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেই মনে করছে প্রশাসন।
সতর্কতা: যাঁরা নদী সংলগ্ন এলাকায় থাকেন, তাঁদের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। প্রয়োজন পড়লে সরকারি ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন।