মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি, কাঁথিতে মহিলা মৎস্যজীবীদের বিক্ষোভ

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: দু’বছর কেটে গেলেও ‘সমুদ্র সাথী’ প্রকল্পের টাকার দেখা নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন পূর্ব…

মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি, কাঁথিতে মহিলা মৎস্যজীবীদের বিক্ষোভ

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: দু’বছর কেটে গেলেও ‘সমুদ্র সাথী’ প্রকল্পের টাকার দেখা নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শতাধিক মহিলা মৎস্যজীবী। নিজেদের দাবি নিয়ে এবার খোলা চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই সঙ্গে কাঁথির মীন ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা।

‘সমুদ্র সাথী’ প্রকল্পের অধীনে প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সমুদ্র মৎস্য শিকার বন্ধ থাকে। এই সময় মাছের প্রজনন কালের কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে। সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, এই ‘ব্র্যান্ড পিরিয়ডে’ মাছ ধরতে না পারা দরিদ্র মৎস্যজীবীদের দুই মাসে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে রাজ্য। কিন্তু বাস্তবে সেই টাকা এখনও হাতে পাননি বহু মৎস্যজীবী পরিবার।

   

পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের মহিলা শাখার উদ্যোগে শুরু হয়েছে পোস্টকার্ড অভিযানের। আগামী এক সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee) কাছে সরাসরি খোলা চিঠি পাঠাবেন মহিলারা। তাঁদের দাবি, দ্রুত প্রকল্পের টাকা ছাড় করতে হবে।

এই ইস্যুতে কাঁথির মৎস্য দফতরের অফিসার মেরিন সুমন সাহার দপ্তরের সামনেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শতাধিক মহিলা মৎস্যজীবী। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশ মেনে দুই মাস মাছ ধরতে না গিয়ে সংসার চালাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে। চিকিৎসা, শিশুদের পড়াশোনা এমনকি দৈনন্দিন খাবার জোগাড় করতেও সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা।

সুতাহাটা ব্লকের মহিলা মৎস্যজীবী বেলা ভূঁইয়া বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ মানার পরও আমরা টাকা পাচ্ছি না। আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’

আর এক আন্দোলনকারী পূর্ণিমা শীট বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানরা উপোস করছে, অথচ দপ্তরের অফিসাররা আমাদে কথা বলতেই চান না। বহুবার আবেদন করেও সাড়া পাইনি।’’

Advertisements

বিজেপির পক্ষ থেকেও এই আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘সরকার শুধু প্রতিশ্রুতি দেয়, বাস্তবে তা রূপায়ণ করে না। বাজেটে এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা হয়েছিল। তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল?’’

যদিও জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘মৎস্যজীবীদের অভিযোগ যথাযথ। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মৎস্যজীবীরা এই প্রকল্পের সুফল পাবেন।’’

পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশীষ শ্যামল বলেন, ‘‘সমুদ্র সাথী প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। প্রতিটি মৎস্যজীবী পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে—এটাই আমাদের দাবি। এই দাবিতে আমরা আগামী দিনেও আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’

সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে দু’মাস কাজ বন্ধ রেখে বিপাকে পড়া এই দরিদ্র মৎস্যজীবী মহিলাদের আশা, তাঁদের খোলা চিঠি ও আন্দোলনের জেরে এবার অন্তত সরকারি উদ্যোগে দ্রুত টাকা হাতে আসবে।