অয়ন দে, উত্তরবঙ্গ: আলিপুরদুয়ার জেলার বংশীধরপুর এলাকায় বুনো হাতির তাণ্ডব আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে বেরিয়ে আসা পাঁচটি হাতির একটি দল গত শুক্রবার গভীর রাতে এলাকায় প্রবেশ করে। রাতভর কাঠালবাড়ি এবং বংশীধরপুরের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালিয়েছে এই হাতির দল। ফসলের ক্ষতি, গ্রামের মধ্যে হাতির ঘোরাফেরা এবং সামগ্রিক আতঙ্কের পরিবেশে স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমতো ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক পরিমল সরকার জানান, শনিবার সকালে তাঁর লাউ খেতে হামলা চালায় হাতির দলটি। পুরো খেতটি তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের জন্য ফসলই জীবনধারণের প্রধান উৎস। এই ধরনের ঘটনা তাঁদের জীবিকার উপর বড় ধরনের আঘাত হানে। তিনি বলেন, “আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আমরা কী খাব? এই হাতির আক্রমণ আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি এলাকায় বুনো হাতির উপদ্রব নতুন নয়। প্রায়ই হাতির দল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে ফসল নষ্ট করে এবং মানুষের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করে। এই ঘটনায়ও হাতির দলটি শুধু ফসল নষ্ট করেই ক্ষান্ত হয়নি, গ্রামের মধ্যে ঘোরাফেরা করে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এক গ্রামবাসী বলেন, “রাতে ঘুমানোর সময়ও ভয় লাগে। কখন হাতি এসে বাড়ি ভাঙবে বা কাউকে আক্রমণ করবে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।”
বন দপ্তরের হস্তক্ষেপে এবং স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় হাতির দলটিকে শনিবার সকালে জঙ্গলের দিকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। তবে, গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। তাঁরা দাবি করেছেন, বন দপ্তরকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। একজন বাসিন্দা বলেন, “বন দপ্তরের লোকজন এসে হাতিগুলোকে জঙ্গলে ফেরত পাঠালেও, এটা তো প্রতিদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই এর স্থায়ী সমাধান হোক।”
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে এশীয় একশৃঙ্গ গন্ডার, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতি সহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। তবে, এই হাতির দল প্রায়ই জঙ্গল ছেড়ে কাছাকাছি গ্রামে প্রবেশ করে, যা স্থানীয়দের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরে এই ধরনের ঘটনায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামবাসীরা বলছেন, বন দপ্তরের পক্ষ থেকে বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়োগ এবং হাতি তাড়ানোর জন্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
বন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, হাতিদের জঙ্গলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা নিয়মিত কাজ করছেন। তবে, হাতিরা খাদ্য ও পানির সন্ধানে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, “আমরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের সুরক্ষার জন্য কাজ করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।”
গ্রামবাসীরা আশা করছেন, বন দপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসন এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করবে। তাঁদের দাবি, হাতির প্রবেশ ঠেকাতে বৈদ্যুতিক বেড়া বা অন্য কোনও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হোক, যাতে তাঁরা নির্ভয়ে বসবাস করতে পারেন।