কলকাতা: শরতের শেষ প্রান্তে পৌঁছে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গের আকাশ যেন এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তায় ডুবে গেছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) আজ, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, সকাল থেকে রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা ঘোষণা করেছে। বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গঠিত একটি গভীর চাপের এলাকা দ্রুত তীব্রতর হয়ে সাইক্লোনিক স্টর্মে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা আজ বিকেল থেকে রাজ্যের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টির ঝড় তুলবে।
দক্ষিণবঙ্গে কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং হুগলি জেলাগুলোতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বজ্রপাত এবং হঠাৎ হাওয়ার সাথে যুক্ত হতে পারে। উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর এবং মালদা জেলাগুলোতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে, কিন্তু বৃষ্টির তীব্রতা কালের মতো বাড়তে পারে।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, মঙ্গলবারের মধ্যে তীব্র রূপ নেওয়ার শঙ্কা
আইএমডি জানিয়েছে, এই বৃষ্টির ফলে স্থানীয় স্তরে জলাবদ্ধতা এবং যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে কলকাতা এবং তার আশেপাশের এলাকায়।আইএমডির সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গঠিত এই লো প্রেশার এলাকা পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং আজ সকাল ৫:৩০ টা (আইএসটি) সিঙ্গাপুরের কাছে ল্যাটিটিউড ১১.১° উত্তর এবং লংগিটিউড ৮৭.২° পূর্বে কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
এটি দ্রুত গভীর চাপে পরিণত হয়ে সাইক্লোনিক স্টর্মে রূপ নেবে, যা আজ বিকেল থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে স্কোয়ালি বাতাস ৩৫-৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিতে বইবে, গাস্টিং সহ ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রের ঢেউ উঁচু হবে, যা ২৮ অক্টোবর সকাল থেকে ২৯ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত খুব উঁচু থাকবে।
আইএমডি মৎস্যজীবীদের সতর্ক করে বলেছে, ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত উপকূলে যাতায়াত করা যাবে না, এবং যারা গভীর সমুদ্রে আছেন, তারা আজই কোস্টলাইনে ফিরে আসুন। হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যা মানে ‘সতর্ক থাকুন’—কিন্তু কোনো লাল বা কমলা সতর্কতা নেই, যাতে স্বস্তির একটু হাওয়া বইছে।উত্তরবঙ্গের কথা বললে, পাহাড়ি জেলাগুলোতে আজ আকাশ মেঘলা থাকবে, কিন্তু বৃষ্টির পরিমাণ হালকা থাকার সম্ভাবনা।
তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৮-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘুরবে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি বেশি। দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ে হিমালয়ের চূড়ায় কুয়াশা ঘন হতে পারে, যা পর্যটকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
কৃষকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন, কারণ এই হালকা বৃষ্টি ধানের শেষ ফসলের জন্য উপকারী, কিন্তু জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের সমতলভাগে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। আইএমডির সতর্কতা মেনে চলব।”দক্ষিণবঙ্গে চিত্রটি কিছুটা ভিন্ন।
কলকাতায় আজ সকাল থেকে আংশিক মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, কিন্তু বিকেলে বৃষ্টির ঝাপটা পড়তে পারে। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩১-৩২ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে, যা শহরের বাসিন্দাদের জন্য গরম-আর্দ্রতার দ্বৈত আঘাত। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের গতি বাড়বে, যা গাছপালা উড়িয়ে নেওয়ার মতো হতে পারে।
আইএমডি জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টির তীব্রতা বাড়বে, যা উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির রূপ নেবে। এই সময়ে অরুণাচল প্রদেশের উপকূলে সাইক্লোন ল্যান্ডফল করতে পারে, যা বাংলার আবহাওয়াকে প্রভাবিত করবে।
