অয়ন দে, কোচবিহার| মাথাভাঙ্গা পশ্চিমপাড়ার প্রবীণ দম্পতি সুজিত সরকার এবং নুপুর সরকার তাঁদের ২৫তম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনন্য ও মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রজতজয়ন্তী বর্ষের এই বিশেষ দিনে তাঁরা শুধু মরণোত্তর দেহদান ও চক্ষুদানের (Organ Donation Awareness) অঙ্গীকারই নয়, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাজের কাছে এক বিরল বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের এই উদ্যোগ কেবল তাঁদের দাম্পত্য জীবনের মাইলফলককে স্মরণীয় করে রাখেনি, বরং সমাজে মরণোত্তর দেহদান ও অঙ্গদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছে।
মাথাভাঙ্গার একটি স্থানীয় ভবনে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে সুজিত সরকার ও নুপুর সরকার তাঁদের ২৫ বছরের সফল দাম্পত্য জীবনের স্মৃতি উদযাপনের পাশাপাশি মরণোত্তর দেহদান, চক্ষুদান এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেন। এই মুহূর্তে তাঁদের এই সিদ্ধান্ত অনেকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য ব্যক্তিরাও তাঁদের এই মহৎ উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেন। এই সম্মিলিত প্রয়াস এই উদ্যোগের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা দেহদান ও অঙ্গদানের সামাজিক ও চিকিৎসাগত গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা জানান, মরণোত্তর দেহদান ও অঙ্গদানের মাধ্যমে একজন মানুষ মৃত্যুর পরেও অসংখ্য জীবন বাঁচাতে পারে। এই ধরনের উদ্যোগ চিকিৎসা গবেষণা এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুজিত সরকার তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “আমাদের জীবনের এই বিশেষ দিনে আমরা সমাজের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। দেহদানের মাধ্যমে আমরা চাই মানুষের জীবনে আলো ছড়িয়ে যাক।” নুপুর সরকারও তাঁর স্বামীর এই উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, “এই অঙ্গীকার আমাদের দাম্পত্য জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।”
অনুষ্ঠানে আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল জ্যোতি বসু সমাজ চর্চা এবং গবেষণা কেন্দ্রের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান। এই কেন্দ্রের সম্পাদক ডাক্তার ফুয়াদ হালিমের হাতে ২৬ হাজার টাকার অনুদান তুলে দেওয়া হয়। এই অর্থ সমাজসেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হবে বলে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই দম্পতির প্রশংসা করে বলেন, তাঁদের এই উদ্যোগ অন্যদেরও এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে।
এই অনুষ্ঠান শুধু একটি বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি সমাজে মানবিক মূল্যবোধ ও সচেতনতার এক নতুন ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সুজিত ও নুপুর সরকারের এই মহৎ পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁদের এই অঙ্গীকার সমাজের প্রতি তাঁদের গভীর দায়বদ্ধতা মানুষের জীবনে নতুন আশার বার্তা ছড়িয়ে দেবে।