দেশ থেকে নকশাল-মাও সন্ত্রাস নিশ্চিহ করার লক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার। ঝাড়খন্ড, ছত্তিসগড় মহারাষ্ট্রের মতো নকশাল অধ্যুষিত রাজ্যগুলিকে সন্ত্রাস মুক্ত করার লক্ষে এবার বিরাট পদক্ষেপ মোদী সরকারের। মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলি জেলায় নকশালবিরোধী অভিযানে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী (nsg)-কে মোতায়েন করা হয়েছে। এই অভিযানে এনএসজি-র মোতায়েন এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ঘটেছে, যা নকশালবিরোধী প্রচেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
গড়চিরোলি, (nsg) মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ অঞ্চলে অবস্থিত, বামপন্থী চরমপন্থী (LWE) প্রভাবিত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম। এনএসজি, যারা সন্ত্রাসবিরোধী এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে দক্ষতার জন্য পরিচিত, তাদের এই মোতায়েন নকশাল গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে অভিযানের কার্যকারিতা বাড়াবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর আগে, ৬ জুন গড়চিরোলিতে ১২ জন কট্টর নকশাল, যাদের মাথায় মোট ১ কোটি টাকারও বেশি পুরস্কার ঘোষিত ছিল, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীসের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেছেন। এই ঘটনা নকশাল আন্দোলনের প্রতি তাদের আস্থাহীনতার প্রতিফলন বলে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।
এনএসজি-র মোতায়েন: নকশালবিরোধী অভিযানে নতুন শক্তি (nsg)
গড়চিরোলির ঘন জঙ্গল ও দুর্গম ভূখণ্ড নকশালদের (nsg) জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। এই অঞ্চলে নকশালদের বিরুদ্ধে অভিযানে সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (CRPF), এবং রাজ্য পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তবে, এনএসজি-র মোতায়েন এই অভিযানে কৌশলগত দক্ষতা এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে এসেছে।
এনএসজি-র বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা গড়চিরোলির (nsg) নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনএসজি-র সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয় নকশালদের বিরুদ্ধে অভিযানকে আরও কার্যকর করবে। এই পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নকশালবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১২ জন নকশালের আত্মসমর্পণ
৬ জুন, গড়চিরোলির কাওয়ান্দে গ্রামে, যা মহারাষ্ট্র-ছত্তিশগড় সীমান্তে অবস্থিত, ১২ জন কট্টর নকশাল তাদের অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এই ঘটনা গড়চিরোলির নকশালবিরোধী (nsg) অভিযানে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস এই ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি এই অঞ্চলে প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাওয়ান্দে গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি আত্মসমর্পণকারী নকশালদের হাতে ভারতের সংবিধানের একটি কপি তুলে দিয়ে তাদের মূলধারায় ফিরে আসার প্রতীকী অঙ্গীকার গ্রহণ করেন।
এই ১২ জন নকশালের মধ্যে এমন ব্যক্তিরা ছিলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে নকশাল (nsg) আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তাদের মাথায় মোট ১ কোটি টাকারও বেশি পুরস্কার ঘোষিত ছিল। ফড়নবীস বলেন, “এই আত্মসমর্পণ প্রমাণ করে যে নকশালরা তাদের নিষিদ্ধ আন্দোলনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। এটি তাদের সহকর্মীদের কাছে একটি বার্তা যে তারা মূলধারায় ফিরে আসুক বা কঠোর পদক্ষেপের সম্মুখীন হোক।”
নকশালবাদ নির্মূলের লক্ষ্য
মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবীস ঘোষণা করেছেন যে, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মহারাষ্ট্র থেকে নকশালবাদ (nsg) সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে। তিনি জানান, গত ১৮ মাসে গড়চিরোলিতে ২৮ জন মাওবাদী নিহত, ৩১ জন গ্রেপ্তার এবং ৪৪ জন আত্মসমর্পণ করেছেন, যা একটি রেকর্ড। তিনি বলেন, “নকশালবাদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। মহারাষ্ট্রে এখন খুব কম সংখ্যক সক্রিয় নকশাল রয়েছে। যারা এখনও অবশিষ্ট আছে, তাদের কাছে আমার বার্তা—হয় আত্মসমর্পণ করুন, নয়তো গ্রেপ্তার বা নিষ্ক্রিয় করা হবে। যারা আত্মসমর্পণ করবে, তাদের সরকারি নীতি অনুযায়ী পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া হবে।”
ফড়নবীস আরও বলেন, আত্মসমর্পণকারী (nsg) নকশালরা দেশ এবং সংবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে চায় এবং মূলধারায় ফিরে আসতে ইচ্ছুক। তিনি এই ঘটনাকে নকশালবিরোধী অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন।
নকশালবাদের পটভূমি এবং চ্যালেঞ্জ
গড়চিরোলি (nsg) দীর্ঘদিন ধরে নকশালবাদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের দুর্গম জঙ্গল এবং পাহাড়ি ভূখণ্ড নকশালদের জন্য কৌশলগত সুবিধা প্রদান করে। নকশালরা সরকারি বাহিনীর উপর হামলা, অপহরণ এবং বিস্ফোরণের মাধ্যমে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। তবে, গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টায় নকশালবাদের প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (nsg) অমিত শাহ বারবার বলেছেন যে, নকশালবাদ ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি, এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এটি সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে। গড়চিরোলিতে এনএসজি-র মোতায়েন এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এনএসজি-র উন্নত প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষমতা নকশালদের বিরুদ্ধে অভিযানকে আরও কার্যকর করবে।
পুনর্বাসন ও উন্নয়নের উদ্যোগ
মহারাষ্ট্র সরকার নকশাল-প্রভাবিত এলাকাগুলিতে উন্নয়নমূলক কাজের উপর জোর দিয়েছে। গড়চিরোলিতে রাস্তা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে, যাতে স্থানীয় জনগণ নকশাল আন্দোলনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়। ফড়নবীস বলেন, “আমরা কেবল নকশালদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাচ্ছি না, আমরা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছি।” তিনি জানান, আত্মসমর্পণকারী নকশালদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি রয়েছে, যার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, চাকরি এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
গড়চিরোলিতে মুখ্যমন্ত্রীর সফর এবং নকশালদের আত্মসমর্পণ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি সরকারের নকশালবিরোধী নীতির সাফল্য এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। তবে, বিরোধী দলগুলো দাবি করেছে যে, নকশালবাদ নির্মূলের জন্য কেবল সামরিক অভিযান যথেষ্ট নয়; স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের উপর আরও বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন।
গড়চিরোলিতে এনএসজি-র মোতায়েন এবং ১২ জন নকশালের আত্মসমর্পণ নকশালবিরোধী অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবীসের ২০২৬ সালের মধ্যে নকশালবাদ নির্মূলের প্রতিশ্রুতি এবং এনএসজি-র মতো অভিজাত বাহিনীর সম্পৃক্ততা এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে ৫,০০০ টাকা জরিমানা! জানুন বিস্তারিত
তবে, এই সাফল্য (nsg)দীর্ঘমেয়াদী হবে কিনা, তা নির্ভর করবে সরকারের পুনর্বাসন নীতি এবং উন্নয়নমূলক প্রচেষ্টার উপর। গড়চিরোলির এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নীতির একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানকে তুলে ধরে।