প্রসেনজিৎ চৌধুরী: দীর্ঘ বাম জমানায় কোচবিহার থেকে বারবার সিংহ গর্জন করে সিপিআইএমের মুন্ডপাত করতেন বামফ্রন্টের শরিকদল ফরওয়ার্ড ব্লকের জবরদস্ত নেতা কমল গুহ। বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে সরাসরি চোখে চোখ রেখে যে কয়েকজন অল্পবিস্তর বলতে পারতেন তাদের একজন অবশ্যই অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র আর দ্বিতীয়জন কৃষিমন্ত্রী কমল গুহ। কমলবাবুর সিংহ গর্জনে কোচবিহার জেলাটি ফরওয়ার্ড ব্লকের ঘাঁটি ছিল। সিপিআইএম এখানে ব্যাকফুটে। দীর্ঘ বাম জমানায় কমল গুহ বিভিন্ন ইস্যুতে সুর চড়িয়ে নিজের রাজনৈতিক ধার বজায় রাখতেন। তাঁর পুত্র ফব ছেড়ে পরিবর্তনের জমানায় হয়েছেন তৃণমুলী।
প্রয়াত কমল গুহর পুত্র উদয়ন গুহ এখন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তাঁর আগে গুরুত্বপূর্ণ এই দফতর সামলেছেন কোচবিহারের নাটাবাড়ির প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও শিলিগুড়ির বর্তমান মেয়র গৌতম দেব। এবার উদয়ন গুহ উত্তরকন্যা থেকে উত্তরবঙ্গ শাসন করবেন। গত বাম জমানায় উত্তরবঙ্গ দেখতেন অশোক ভট্টাচার্য।
উদয়ন গুহ মন্ত্রী হওয়ায় দিনহাটার জবরদস্ত গুহ পরিবার থেকে রাজ্য মন্ত্রীত্বের ধারা বজায় থাকল। কমল-উদয়ন বঙ্গ রাজনৈতিক মহলে বিশেষ আলোচিত। জাঁদরেল রাশভারি পিতা কমল গুহর আরও একটি বিশেষ পরিচিতি তিনি বাংলাদেশের একনায়ক সেনাশাসক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মহম্মদ এরশাদের বাল্যবন্ধু। (পরে বাংলাদেশের বিরোধী নেতা ও জাতীয় পার্টির সুপ্রিমো) পিতার সূত্রে এরশাদকে ‘কাকা’ ডাকতেন উদয়ন গুহ। দুই বাল্যবন্ধু কমল-এরশাদ প্রয়াত।
পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রী। বর্ধমান স্টেশন থেকে রোমহর্ষক পর্ব শুরু হয়েছিল। পড়ুন
বাম জমানার পরও উদয়ন ছিলেন বামপন্থী। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতা ও সিপিআইএমের সঙ্গে সংঘাত তীব্র হচ্ছিল। পিতা কমল গুহর প্রয়াণের পর উদয়নের সঙ্গে দলের সংঘাত আরও বাড়ে। একসময় দলের বাংলা কমিটির চেয়ারম্যান থাকা অশোক ঘোষের সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়। দল ছাড়েন উদয়ন। দিনহাটা থেকে ফরওয়ার্ড ব্লক জমি হারায়। গত বিধানসভা ভোটে দিনহাটা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়ে বিজেপির নিশীথ প্রামাণিকের কাছে পরাজিত হন উদয়ন গুহ। পরে নিশীথ সাংসদ হয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হন। আর দিনহাটার উপনির্বাচনে বিজেপিকে রেকর্ড ভোটে হারিয়ে উদয়ন গুহ জয়ী হন।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে উত্তরবঙ্গের জমি শক্ত করতে মরিয়া তৃণমূল নেত্রী মমতা। গত পুরভোটে বিজেপির তৃতীয়স্থানে নেমে যাওয়া ও সিপিআইএমের উঠে আসার পরেও উত্তরবঙ্গে পদ্ম শিবির এখনও শক্তিধর। মনে করা হচ্ছে, সেটি ভাঙতে টাফ উদয়নের হাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর ভার দিলেন মমতা।