“আমার মতোই প্রধানমন্ত্রীরও জন্ম শংসাপত্র নেই”, বিস্ফোরক মন্তব্য উদয়ন গুহর

স্নেহা ঘোষ, জলপাইগুড়ি: “দেশের প্রধানমন্ত্রীরও কোনও জন্ম শংসাপত্র নেই”—এই বিস্ফোরক দাবি করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ (Udayan Guha)। বুধবার জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের মহানপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে…

“আমার মতোই প্রধানমন্ত্রীরও জন্ম শংসাপত্র নেই”, বিস্ফোরক মন্তব্য উদয়ন গুহর

স্নেহা ঘোষ, জলপাইগুড়ি: “দেশের প্রধানমন্ত্রীরও কোনও জন্ম শংসাপত্র নেই”—এই বিস্ফোরক দাবি করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ (Udayan Guha)। বুধবার জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের মহানপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের এক অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, “আমি একজন রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমার যেমন বার্থ সার্টিফিকেট নেই, তেমনই প্রধানমন্ত্রীরও নেই। তখন এই ব্যবস্থা ছিল না।”

এদিন জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের গড়ালবাড়ি এবং রাজগঞ্জ এলাকায় একাধিক উন্নয়নমূলক কাজের সূচনা করেন মন্ত্রী। কিন্তু তাঁর ভাষণের বড় অংশজুড়েই ছিল নাগরিকত্ব সংশ্লিষ্ট জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও রাজনৈতিক বার্তা।

   

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে উদয়ন গুহ বলেন, “ভোটার তালিকা থেকে ভিত্তিহীনভাবে কারও নাম বাদ দেওয়া হলে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে সারা বাংলা প্রতিবাদে রাস্তায় নামবে। কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার পর্যন্ত মানুষ দেখিয়ে দেবে এই আন্দোলনের রূপ কী হতে পারে।”

গড়ালবাড়িতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমার জন্মের সময় কোনও জন্ম শংসাপত্র দেওয়ার নিয়মই ছিল না। আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন কলকাতায় আসেন, লালবাজারের পুলিশ যদি জানতে চায় তাঁর বার্থ সার্টিফিকেট আছে কি না, তিনি তা দেখাতে পারবেন তো?” এখানেই না থেমে তিনি প্রশ্ন তোলেন—“প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাটেও তো আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে, সেখানে অনুপ্রবেশ হয়। তাহলে গুজরাটের অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে মোদি কিছু বলেন না কেন?”

নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র সংক্রান্ত বিষয়ের তীব্র বিরোধিতা করে রাজগঞ্জে উদয়ন গুহ বলেন, “ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড এসব দিয়ে যদি পরিচয় না হয়, তাহলে পদ্মফুল লাগানো আইডি কার্ড দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ হবে? এ এক অপমান বাংলাভাষী ও বাঙালিদের। আজ বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, রাজবংশী—কাউকেই ছেড়ে কথা বলছে না বিজেপি।”

তিনি অভিযোগ তোলেন, “বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেইসব এলাকায় নাগরিকত্বের প্রমাণ চায়, যেখানকার মানুষ তাদের ভোট দেয় না। উত্তম ব্রজবাসীর মতো মানুষের কাছে অসম পুলিশ তাঁর জন্মের আগের কাগজপত্র চাইছে। জন্মের আগের প্রমাণ চাওয়া মানেই গণতন্ত্রের সঙ্গে তামাশা।”

Advertisements

এর আগে উদয়ন গুহ যান গড়ালবাড়ি পঞ্চায়েতের বড়ুয়াপাড়ায়, যেখানে যমুনা নদীর উপর একটি সেতু ও সংযোগ রাস্তাঘাটের কাজের উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি, রাজগঞ্জের মহানপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ থেকেও একটি পেভার্স ব্লকের রাস্তা নির্মাণের সূচনা হয়। বেলাকোবার হালুইপাড়া থেকে ভূতনিপাড়া, সুখানি এলাকার সন্ন্যাসীপাড়া থেকে দালালপাড়া হয়ে কইমারি পর্যন্ত এই নতুন রাস্তাগুলির নির্মাণ হবে।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই তিনটি রাস্তা এবং একটি সেতুর জন্য মোট ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে জলপাইগুড়ি সদর ব্লক এবং রাজগঞ্জের বহু মানুষের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ সমস্যা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের আরেক মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক, স্থানীয় বিধায়ক খগেশ্বর রায়, নির্মলচন্দ্র রায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মন, কর্মাধ্যক্ষ মহুয়া গোপ সহ একাধিক জনপ্রতিনিধি।

উদয়ন গুহর বক্তব্যে স্পষ্ট, শুধু উন্নয়ন নয়—বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব ও পরিচয় নিয়েও তৃণমূল কংগ্রেস উত্তরবঙ্গে কড়া বার্তা দিতে চাইছে বিজেপিকে। বিশেষ করে এনআরসি ও বাঙালি পরিচয়ের প্রশ্নে দল যে সরব হতে চলেছে তারই পূর্বাভাস মিলেছে এদিনের বক্তৃতায়।