জলপাইগুড়ি: বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের সময় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক ডঃ শঙ্কর ঘোষের (Khagen Murmu and Sankar Ghosh) ওপর হামলার ঘটনায় বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ব্যক্তিকে। জলপাইগুড়ি পুলিশ জানিয়েছে, নাগরাকাটায় সংঘটিত এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে আটক করা হয়েছে এবং বাকি অভিযুক্তদের ধরতে তদন্ত চলছে।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডভালে উমেশ গণপত এক বিবৃতিতে বলেন, “নাগরাকাটায় বিজেপি নেতাদের ওপর আক্রমণের ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করব।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একজনকে জলপাইগুড়ি জেলা থেকে এবং অপরজনকে আলিপুরদুয়ার জেলার ভারত-ভুটান সীমান্তের কাছ থেকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার এই হামলার ঘটনাটি ঘটে যখন মালদা উত্তর কেন্দ্রের সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক ডঃ শঙ্কর ঘোষ নাগরাকাটা এলাকায় বন্যার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান। তাঁরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎই উত্তেজিত জনতা তাঁদের গাড়ি ঘিরে ধরে এবং আক্রমণ শুরু করে।
বিজেপির দাবি, এই হামলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন, “জনগণের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আমাদের নেতাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন।”
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। শাসক দলের এক মুখপাত্র বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই। বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মামলায় মোট আটজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, বাকি অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে এবং কেউ কেউ সীমান্ত পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্যে ঢুকে পড়েছে।
নাগরাকাটা এবং আশপাশের এলাকাগুলিতে সাম্প্রতিক সময়ে টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পড়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং প্রশাসনের ত্রাণ কার্যক্রমও ব্যাহত হয়েছে। এই পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিজেপি সাংসদ ও বিধায়ক সেখানে যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জনতার ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিনের অবহেলার বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় বাদে জন প্রতিনিধি কেউ তাঁদের পাশে থাকেন না। সেই ক্ষোভ থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং আক্রমণের রূপ নেয়।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপি রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, অন্যদিকে তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করেছে যে বিজেপি রাজনৈতিক নাটক করছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং খুব শীঘ্রই সমস্ত দোষীদের গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা হবে। এই মামলার তদন্ত এখন রাজ্যজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।