অয়ন দে, কোচবিহার: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই তপ্ত হচ্ছে বাংলার উত্তর দিকের রাজনীতি। সোমবার কোচবিহারের তুফানগঞ্জে বিজেপির থানাঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ফের একবার মাথাচাড়া দিল রাজনৈতিক সংঘর্ষ। দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে বিজেপি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু প্রতিবাদের মঞ্চে রণক্ষেত্রের আবহ—তৃণমূল ও বিজেপি (TMC-BJP Clash) সমর্থকদের মধ্যে রীতিমতো ধস্তাধস্তি, ইটবৃষ্টি, আর তীব্র স্লোগানবাজি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিজেপি বিধায়িকা মালতি রাভা রায় জানান, “আমরা গণধর্ষণের ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে থানার সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু তৃণমূলের কর্মীরা এসে আমাদের উপর চড়াও হয়। পুলিশের সামনেই আমাদের কর্মীদের মারধর করা হয়েছে।” বিধায়িকার অভিযোগ, তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা চালিয়ে বিজেপির কর্মসূচিকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে।
বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অন্তত ১০ থেকে ১২ জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে আহতদের। বিজেপি জেলা সভাপতি জানান, “তৃণমূল বুঝতে পেরেছে মানুষের সমর্থন হারাচ্ছে, তাই ভয় দেখিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করছে।”
অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, বিজেপিই আগে আক্রমণ শুরু করে। তৃণমূল নেতা সুব্রত প্রামাণিক বলেন, “ওরা থানার সামনে উসকানিমূলক স্লোগান তুলছিল। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে ওরাই মারমুখী হয়ে ওঠে। তৃণমূল শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করে, কিন্তু বিজেপি ক্রমাগত অশান্তি ছড়াচ্ছে।”
এই ঘটনায় তুফানগঞ্জ শহরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় দোকানপাট কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
তুফানগঞ্জ থানার এক আধিকারিক জানান, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। উভয় পক্ষের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা দোষী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা বাড়ছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে এই ঘটনাই কি নতুন রাজনৈতিক সংঘর্ষের সূচনা? বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তরবঙ্গে বরাবরই রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রবণতা বেশি। কোচবিহারে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের লড়াই অনেকদিন ধরেই চলছে। সেই প্রেক্ষিতে তুফানগঞ্জের এই সংঘর্ষকে অনেকেই ভবিষ্যৎ ভোটযুদ্ধের ট্রেলার হিসেবে দেখছেন।
এদিকে সাধারণ মানুষ এই লাগাতার সংঘর্ষে উদ্বিগ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা কৌশিক দত্ত বলেন, “প্রতিদিন রাজনীতি নিয়ে গোলমাল হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন নিরাপত্তা চায়, রাজনীতি নয়।” ঘটনার পর প্রশাসনের তরফে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশের পক্ষ থেকে এলাকায় রুট মার্চের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
Recent Comments