জলপাইগুড়ি: রাজ্যের মহিলা সুরক্ষার চিত্র আবারও প্রশ্নের মুখে। জলপাইগুড়ির সুনীতিবালা সদর গার্লস হাই স্কুলে ঘটে গেল এক লজ্জাজনক ঘটনা। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকাকে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করালেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তথা নবনিযুক্ত পৌরসভা চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়। এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে মহিলাদের সামাজিক সুরক্ষা তলানিতে তা সর্বজনবিদিত, বিশেষত কর্মরত মহিলারা কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার হয়ে থাকেন, অনেকাংশে তৃণমূল নেতাদের দ্বারা, সেটাও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে অজানা নয়।
যেমন এই ভিডিও তে দেখা যাচ্ছে, জলপাইগুড়ির সুনীতিবালা সদর গার্লস… pic.twitter.com/SGcRxzRRI3— Suvendu Adhikari (@SuvenduWB) November 10, 2025
সৈকত চট্টোপাধ্যায় শুধু এই স্কুলের সভাপতি নন, তিনি সরকারি ভাবে স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধি হিসেবেও নিযুক্ত। অর্থাৎ প্রশাসনিক অনুমোদন প্রাপ্ত এক সরকারি পদাধিকারী শিক্ষিকাকে এমন অপমান করলেন, যা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে দিল।
নিলামের আগে এই ১৩ ক্রিকেটারকে রেখে ঘর গোছাবে শাহরুখের ফ্র্যাঞ্চাইজি!
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তার এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টে বলেছেন “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার দাবি করে ‘মেয়েরা নিরাপদ, মেয়েরা শক্তি’। কিন্তু বাস্তবে দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাজ্যের বহু কর্মরত মহিলা শিক্ষিকা ও সরকারি কর্মী আজও কর্মক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার, এবং অনেকক্ষেত্রেই অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসে শাসক দলের নাম। জলপাইগুড়ির এই ঘটনার পর সেই অভিযোগ আরও জোরালো হল।”
এই সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের অতীতও বিতর্কে ভরা। শুভেন্দু বলেছেন “২০২৩ সালে জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়া রোডে আইনজীবী সুবোধ ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী অপর্না ভট্টাচার্যের আত্মহত্যার ঘটনায় তাঁর নাম উঠে আসে সুইসাইড নোটে।
তৎকালীন জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি এবং পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সৈকতের নাম ছিল অভিযোগের তালিকায়। সেই মামলায় তাঁর জেলও হয়। অথচ আজ সেই একই ব্যক্তি শহরের পৌরপ্রধান তৃণমূল তাঁকেই দায়িত্ব দিয়েছে শহর পরিচালনার।”
রাজনৈতিক মহলে এখন জোরালো প্রশ্ন “একজন কলঙ্কিত ব্যক্তি, যার নামে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা, যিনি প্রকাশ্যে একজন শিক্ষিকাকে অপমান করেন, তিনিই কি শহরের প্রশাসনিক নেতৃত্বের যোগ্য?” বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাকে “নারীসম্মানের উপর আঘাত” বলে অভিহিত করেছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স-এ লিখেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে পশ্চিমবঙ্গ আজ নারীর জন্য সবচেয়ে অসুরক্ষিত রাজ্য। শিক্ষিকার কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান।”
রাজ্যের মহিলা শিক্ষক সংগঠনও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের এক নেত্রী বলেন, “শিক্ষিকার মর্যাদা ধূলিসাৎ করা হয়েছে। সরকারী দফতরের প্রতিনিধি নিজেই যদি অপমান করেন, তাহলে আর কার কাছে ন্যায়বিচার চাইব?” ঘটনার পর জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি। শিক্ষা দফতরও নীরব। ফলে প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যে কি তৃণমূল নেতাদের জন্য অন্য আইনি মাপকাঠি প্রযোজ্য?
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটি একক কোনো ঘটনার প্রতিফলন নয় বরং ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রশাসনিক নৈতিকতার পতনের প্রতীক।” জলপাইগুড়ির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এল এক নির্মম বাস্তব পশ্চিমবঙ্গে নারীরা নিরাপদ নন, এমনকি তাঁরা যদি তৃণমূল পরিচালিত প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেন। সমাজের অর্ধেক অংশের প্রতি এই অবমাননা যতদিন চলবে, রাজ্যের “মা-মাটি-মানুষ” স্লোগান কেবলই রয়ে যাবে কাগজে-কলমে।

