কোচবিহার: যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য এবং আধুনিক পরিবহণ পরিষেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুজোর আগেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (NBSTC) একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হল স্মার্ট কার্ড পরিষেবা চালু করা, যার মাধ্যমে বাসযাত্রায় আর টিকিট কাটার ঝামেলা থাকবে না। এই স্মার্ট কার্ড একবার কিনে নিয়ে যাত্রীরা প্রয়োজন মতো মোবাইল রিচার্জের মতো টাকা ভরে ব্যবহার করতে পারবেন। নিগম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কাজের প্রায় ৯০ শতাংশ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে এবং পরবর্তীতে এই কার্ড রাজ্যের সমগ্র পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হবে।
বৃহস্পতিবার কোচবিহার সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত নিগমের ২৩৫তম বোর্ড মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় সাংবাদিক বৈঠকে জানান, “রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থায় স্মার্ট কার্ড চালু হতে চলেছে। এনবিএসটিসি সেই উদ্যোগের অগ্রদূত হয়ে কাজ করছে। এর ফলে যাত্রীদের সময় এবং পরিশ্রম—দুটোই বাঁচবে।”
এর পাশাপাশি, এনবিএসটিসি শিগগিরই ছ’টি আধুনিক ভলভো স্লিপার বাস চালু করতে চলেছে, যা মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর-সহ বিভিন্ন শহর থেকে জনপ্রিয় সমুদ্রতট দিঘা পর্যন্ত চলাচল করবে। উৎসবের মৌসুমে দীর্ঘ যাত্রাকে আরও আরামদায়ক করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
শুধু নতুন পরিষেবা নয়, কর্মীদের কল্যাণেও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫০০ অস্থায়ী কর্মীর বেতন ৫০০ টাকা করে বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও চালকদের বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই হয়েছে, কন্ডাক্টর ও মেকানিকদের বেতন বৃদ্ধি হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে এবং দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও মিলেছে। তবে পুজোর আগে এই দুই বিভাগে কর্মরত প্রায় এক হাজার কর্মীকে অগ্রিম বেতন প্রদান করা হবে—যার মধ্যে কন্ডাক্টরদের ২,৫০০ টাকা এবং মেকানিকদের ৩,৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে।
এছাড়াও বোর্ড মিটিংয়ে পরিবহণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়াতে বেশ কিছু রুট পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন করে ৩০টি রুট চালু হবে এবং অলাভজনক কয়েকটি রুট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পরিষেবার মানোন্নয়ন—দুটোকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল, নিগমের বাসগুলিতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা। কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রচার-প্রসার এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হবে।
এনবিএসটিসির এই বহুমুখী উদ্যোগ শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, সমগ্র রাজ্যের যাত্রী পরিষেবার মান উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে মনে করছেন পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা। স্মার্ট কার্ড চালু হলে একদিকে যেমন টিকিট কেটে ওঠার ঝামেলা থাকবে না, তেমনই ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ যাত্রীদের জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দেবে। অন্যদিকে ভলভো স্লিপার বাস সংযোজন দীর্ঘপথের যাত্রাকে করবে আরও আরামদায়ক ও সময় সাশ্রয়ী।
সব মিলিয়ে পুজোর আগেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের এই নতুন উদ্যোগ রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত পরিষেবার সংযোজন ঘটাবে, যা যাত্রী এবং কর্মী—উভয়ের জন্যই সমানভাবে উপকারী হবে।