পৃথিবীর বুকে প্রতিটি জীবন মূল্যবান। কিন্তু যখন এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে, তখন সেই মূল্যবান জীবনগুলো অকালে নিঃশেষ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনা আমাদের এই সত্যটি আবার মনে করিয়ে দিল। মালবাজার ও চালসার মাঝে সাতখাইয়া এলাকায় ১৭ নাম্বার জাতীয় সড়কে (National Highway Accident) একটি অল্টো গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় একটি পেপার বোঝাই বোলেরো গাড়ির। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় তিন জনের, আহত হন আরও দুই জন।
বানারাহাটের লক্ষীপাড়া চাবাগানের এক গর্ভবতী মহিলা, সরস্বতী ওরাও, তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হন। পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে আসছিলেন মালবাজারের সুপার স্পেশালি হাসপাতালে। সবাই আশা করছিলেন, নতুন একটি জীবনের আগমনের অপেক্ষায় আছেন তারা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম খেলায় তাদের আশা দুরাশায় পরিণত হলো।
অল্টো গাড়িটি যখন চালসা পার করে সাতখাইয়া এলাকায় পৌঁছায়, তখনই ঘটে দুর্ঘটনাটি। মালবাজারের দিক থেকে আসা একটি বোলেরো গাড়ি অল্টো গাড়িটিকে মুখোমুখি ধাক্কা মারে। দৃশ্যটি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। দুটি গাড়ি দুমরে মুচড়ে গিয়ে রাস্তার পাশের ডোবায় পড়ে যায়। যে মুহূর্তে গাড়িগুলো ধাক্কা খায়, তখন চারপাশের মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সরস্বতী ওরাও এবং তার বোন নিতা ওরাও-এর। একই সঙ্গে, ছোট গাড়ির চালক আমন ওড়াওও গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবাড়ী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে মারা যান। এভাবে, একটি পরিবারের দুই প্রিয়জনের জীবন মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে যায়। এটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি জীবনের সূর্য অস্তমিত হওয়ার ঘটনা।
বর্তমানে মাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রেম ওরাওঁ এবং সিতা ওড়াও-এর শারীরিক অবস্থাও গুরুতর। তাদের মানসিক অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। একটি দুর্ঘটনার পর যে শোক, বেদনা ও অসহায়ত্বের সৃষ্টি হয়, তা কল্পনাও করা যায় না।
এ ধরনের দুর্ঘটনা কেবল নিহতদের পরিবারকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং সমাজের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সামাজিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা ও শান্তি নষ্ট করে। দেশের প্রতিটি সড়কেই এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যার ফলস্বরূপ অনেক অকাল মৃত্যু ঘটে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সচেতনতা
যতদিন না পর্যন্ত সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি সঠিকভাবে নজর দেওয়া হবে, ততদিন এই দুর্ঘটনা যেন বন্ধ না হয়। আমাদের উচিত সড়কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা। বিশেষ করে, নবাগত চালকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সড়ক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
মোটর গাড়ি চালানোর সময় সবার উচিত সতর্ক থাকা এবং অন্যদের প্রতি সদয় মনোভাব পোষণ করা। নিরাপদ সড়ক আমাদের সকলের দায়িত্ব। নিরাপত্তার প্রতি আমাদের অবহেলা না করে, সচেতন হতে হবে।