মালদহ: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে বঙ্গ রাজনীতি। ঠিক এই সময়েই বিজেপির অন্দরে আলোড়ন তুলেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। মালদহের সাহাপুরে এক সভায় মিঠুন বলেন, “দল যদি চায়, আমি মুখ্যমন্ত্রী হব।” আর তাঁর এই বক্তব্যেই নতুন করে জল্পনার ঝড় উঠেছে বঙ্গ রাজনীতিতে।
সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যসহ বিজেপির বহু শীর্ষনেতা। সভা চলাকালীনই একাংশ বিজেপি কর্মী প্রকাশ্যে দাবি করেন, তাঁরা মিঠুন চক্রবর্তীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। কর্মীদের এই প্রস্তাবে মিঠুনের জবাব, “আমাদের দলে এই সব আগে থেকে ঠিক করা হয় না। সবাই লড়ে, পরে দল সিদ্ধান্ত নেয়। দল চাইলে আমি হব, না হলে অন্য কেউ।”
তবে তাঁর এই ‘সতর্ক’ মন্তব্যেও রাজনীতির মঞ্চে আলোচনার ঝড় উঠেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, মিঠুনের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত বার্তা পরিষ্কার তিনি বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে প্রস্তুত, যদি দল তাঁর প্রতি আস্থা রাখে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি বিজেপির অভ্যন্তরে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্ব নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে?
প্রসঙ্গত, বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে আগেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই সময় রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছিলেন, “পার্টি এখনও কোথাও কাউকে মুখ করেনি, প্রয়োজন হলে করবে।” তাঁর মন্তব্যে অনেকেই বুঝেছিলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভার দিল্লির নেতৃত্বের উপরই রইল।
এই প্রেক্ষাপটে মিঠুনের প্রকাশ্য মন্তব্য রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীকরণকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। বিজেপির ভিতরকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, দিলীপ ঘোষ–শুভেন্দু অধিকারীর দূরত্ব এবং সংগঠনের ভিতরে মতবিরোধ এখন প্রায় প্রকাশ্য। এই অবস্থায় মিঠুন চক্রবর্তীর মতো সর্বভারতীয় পরিচিতি সম্পন্ন জনপ্রিয় মুখকে সামনে আনা দলের জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপও হতে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
তবে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এখনই এ বিষয়ে মুখ খুলছে না। কেউ কেউ বলছেন, এটি “কর্মীদের আবেগ”, কেউ আবার মনে করছেন, এটি দলের ভেতরে নতুন নেতৃত্বের সন্ধানের ইঙ্গিত।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মিঠুনের জনপ্রিয়তা ও ইমেজ রাজ্য রাজনীতিতে দলকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে। বিশেষত শহর ও গ্রামের সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বিজেপির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ২০২৬-এর যুদ্ধে বিজেপি কাকে সামনে আনবে? শুভেন্দু অধিকারী না মিঠুন চক্রবর্তী? দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই তার উত্তর দেবে। রাজ্য রাজনীতিতে এখন একটাই আলোচনা “মিঠুন কি তবে বঙ্গ বিজেপির মুখ?”


