জরুরি বৈঠক নবান্নে, ত্রাণে প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ মমতার

কলকাতা: উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা ও ধস পরিস্থিতি (North Bengal Flood) মোকাবিলায় রবিবার জরুরি বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা ভারী বৃষ্টির ফলে দার্জিলিং, কালিম্পঙ, জলপাইগুড়ি,…

mamata-criticizes-modi-government-on-gst-during-khidirpur-puja-inauguration

কলকাতা: উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা ও ধস পরিস্থিতি (North Bengal Flood) মোকাবিলায় রবিবার জরুরি বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা ভারী বৃষ্টির ফলে দার্জিলিং, কালিম্পঙ, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, মুখ্যসচিব, ডিজিপি ও উত্তরবঙ্গের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন – যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে এবং উদ্ধার অভিযান জোরদার করতে হবে।

Advertisements

গত ২৪ ঘণ্টায় প্রবল বৃষ্টিপাতে দার্জিলিং ও সংলগ্ন জেলাগুলির একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সাঙ্কোশ নদী উপচে পড়েছে এবং ভুটান ও সিকিম থেকে অতিরিক্ত জল ঢুকে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, “গতরাতে মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে হঠাৎ বন্যা এবং ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে, যা একাধিক প্রাণহানির কারণ হয়েছে।”

   

দার্জিলিংয়ের মিরিকে লোহার সেতু ভেঙে পড়ায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুখিয়াতে সাত জন এবং বিজনবাড়িতে একজনের প্রাণ গেছে। দুইটি সেতু ভেঙে গিয়েছে, বহু রাস্তা ধসে বন্ধ হয়ে গেছে এবং কালিম্পঙ ও সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আটকে পড়েছেন শতাধিক পর্যটক।

এই কঠিন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পর্যটকদের অনুরোধ করছি আপাতত যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। রাজ্য সরকার তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে আনবে এবং সমস্ত খরচ বহন করবে। কোনও আতঙ্কের কারণ নেই।”

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “এই বিপর্যয়ে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের হারিয়েছি। তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। রাজ্য সরকার নিহতদের পরিবারকে অবিলম্বে আর্থিক সহায়তা পাঠাবে।”

নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী একযোগে কাজ শুরু করেছে। প্রতিটি ব্লক ও পঞ্চায়েত পর্যায়ে ত্রাণ শিবির গড়ে তোলা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খাদ্য, ওষুধ, কম্বল ও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি রাতভর পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। মুখ্যসচিব, ডিজিপি এবং সমস্ত জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ করছি। রবিবার আমি নিজে মুখ্যসচিবকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে।”

তিনি আরও জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হল মিরিক, মাটিগাড়া, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার। সেখানে কৃষিজমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে এবং পরিবহণ ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নবান্নের বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বরগুলি হল +91 33 2214 3526 এবং +91 33 2253 5185। টোল ফ্রি নম্বরগুলি: +91 86979 81070 এবং 1070।

রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা সবাই মিলে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠব। প্রশাসনের সমস্ত দপ্তর ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। কেউ যেন একা বা অসহায় মনে না করে – রাজ্য সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।”