অয়ন দে, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ারের ডিমা চা বাগানে কাজ করার সময় লেপার্ডের হঠাৎ হামলায় (Leopard Attack) গুরুতর আহত হয়েছেন এক মহিলা চা শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে চা বাগানের নতুন ডিভিশনে। আহত শ্রমিকের নাম বন্ধেন মুণ্ডা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা চা বাগান জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র আতঙ্ক ও চাঞ্চল্য।
Read HindI: डीमा चाय बागान में तेंदुए के हमले में महिला मजदूर घायल
জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো বন্ধেন মুণ্ডা চা বাগানে পাতা তুলছিলেন। হঠাৎ বাগানের একটি নালা থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে আসে একটি লেপার্ড এবং সরাসরি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণের ফলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং গুরুতরভাবে জখম হন। তার চিৎকার শুনে আশপাশে কাজ করা অন্যান্য শ্রমিকরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। তড়িঘড়ি তাকে লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকদের মতে, তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে।
এই ঘটনার পর চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তারা জানান, ডিমা চা বাগান জঙ্গলের কাছাকাছি অবস্থিত, যার ফলে বন্যপ্রাণীদের আনাগোনা এখানে নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন চা বাগানে লেপার্ডের হামলার ঘটনা বেড়েছে। শ্রমিকরা দাবি করেছেন, বন দপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। এক শ্রমিক বলেন, “আমরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। বন দপ্তরের উচিত বাগানে ক্যামেরা বা খাঁচা বসিয়ে লেপার্ডের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা।”
স্থানীয় প্রশাসন ও বন দপ্তর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। জলপাইগুড়া বন বিভাগের এক আধিকারিক জানান, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লেপার্ডটির গতিবিধি নজরে রাখতে বাগানে ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য খাঁচা স্থাপন করা হবে।” তিনি আরও জানান, আহত শ্রমিকের চিকিৎসার খরচ বন দপ্তর বহন করবে।
চা বাগানের শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বাগানের শ্রমিকরা অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করছে।” তিনি আরও দাবি করেন, বন্যপ্রাণী ও মানুষের মধ্যে সংঘাত কমাতে জঙ্গলের সংরক্ষণ এবং বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
স্থানীয়রা জানান, জঙ্গলের ক্রমশ সংকোচন এবং চা বাগানের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে লেপার্ডরা প্রায়ই খাদ্যের সন্ধানে বাগানে ঢুকে পড়ে। এই ঘটনার পর শ্রমিকদের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার অনীহা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে কাজে ফিরতে ভয় লাগছে।
এই ঘটনা আলিপুরদুয়ারের চা বাগানগুলিতে মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাতের একটি বড় সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করে। শ্রমিকরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বন দপ্তরের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন, যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।