দিল্লিতে সন্ত্রাসবাদী বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই দেশের সর্বত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে পূর্ব রেলের দুই গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনাল হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে (Sealdah station high alert)। প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন এই স্টেশন দু’টিতে, ফলে নাশকতার আশঙ্কা মাথায় রেখেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হাওড়া স্টেশন পরিদর্শন করেন পূর্ব রেলওয়ের আইজি-কাম-প্রিন্সিপাল চিফ সিকিউরিটি কমিশনার অমিয় নন্দন সিনহা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাওড়া ডিভিশন এবং পূর্ব রেলের সদর দফতরের উচ্চপদস্থ আরপিএফ আধিকারিকরা। পরিদর্শনের সময় স্টেশনের সিসিটিভি সার্ভেল্যান্স সিস্টেম, ফেস রিকগনিশন সিস্টেম (FRS), ব্যাগেজ স্ক্যানার ও বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা তিনি খতিয়ে দেখেন।
আইজি জানান, দিল্লির ঘটনার পরই আরপিএফের আরও দুটি অতিরিক্ত কোম্পানি হাওড়া ও শিয়ালদহে মোতায়েন করা হয়েছে। কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন থেকে আরপিএফ জওয়ানদের সরিয়ে এনে এই দুটি ব্যস্ততম স্টেশনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটি জওয়ান এখন থেকে সশস্ত্র অবস্থায় ডিউটি করবেন। পাশাপাশি স্টেশনের সমস্ত প্রবেশপথে অ্যাক্সেস-কন্ট্রোল ব্যবস্থা আরও কড়া করা হয়েছে।
সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তু শনাক্ত করতে স্নিফার ডগ স্কোয়াড, বিস্ফোরক সন্ধানকারী যন্ত্র এবং মেটাল ডিটেক্টর টিমকে ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত অবস্থায় রাখা হয়েছে। যাত্রীদের লাগেজ চেকিং এখন আরও কঠোরভাবে করা হচ্ছে। প্ল্যাটফর্ম, সাবওয়ে, ওয়েটিং হল, ফুট ওভার ব্রিজ প্রতিটি এলাকায় সারপ্রাইজ চেকিং চালাচ্ছে আরপিএফ।
গোয়েন্দা বিভাগ, জিআরপি, রেল পুলিশ এবং আরপিএফের যৌথ উদ্যোগে নাশকতা-বিরোধী তল্লাশি দল তৈরি করা হয়েছে। তারা স্টেশনের প্রতিটি কোণে রুট মার্চ করছে। সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং বিদ্যমান ক্যামেরাগুলিকে আরও উন্নত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য র্যাপিড রেসপন্স টিমও সর্বদা মোতায়েন রাখা হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গিয়েছে, যদিও এখনও পর্যন্ত হাওড়া বা শিয়ালদহে কোনও সন্দেহজনক বস্তু বা ব্যক্তি ধরা পড়েনি, তবে পরিস্থিতির জটিলতা বিবেচনা করেই কড়া সতর্কতা জারি রয়েছে। দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনাটি দেখিয়ে দিয়েছে বৃহৎ জনসমাগমস্থল সবসময়ই সম্ভাব্য লক্ষ্য হতে পারে। তাই প্রস্তুতিকে কোনওভাবেই শিথিল করতে চাইছে না রেল কর্তৃপক্ষ।
আইজি অমিয় নন্দন সিনহা সাধারণ মানুষের সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, “স্টেশনে কোনও সন্দেহজনক ব্যক্তি বা বস্তু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আরপিএফ বা রেল কর্তৃপক্ষকে জানান। জনগণ সতর্ক থাকলে বড় ধরনের বিপদ অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।”
হঠাৎ এই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক যাত্রীকে কিছুটা আতঙ্কিত করলেও রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এটি শুধুই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। জনবহুল অঞ্চলে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। শহরজুড়ে সতর্কতা থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি।
