কালিয়াগঞ্জ: ছাত্রীদের স্নানের সময় গোপন নজরদারির অভিযোগ ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের তরঙ্গপুর বরাল হরলাল বালিকা বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের হস্টেলের (Hostel) আবাসিক ছাত্রীদের একাংশ সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে স্নানের সময় তাঁদের কার্যকলাপ সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরবন্দি করা হচ্ছে। অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে হস্টেলের এক কর্মীর নাম— সুব্রত মণ্ডল ওরফে শঙ্কু।
একাদশ শ্রেণির একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করেছে, হস্টেলের (Hostel) দোতলায় বাথরুম থাকলেও তা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে ছাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরে নিচতলার কলপাড়েই স্নান করতে হচ্ছে। আর সেই এলাকাতেই তিন বছর আগে বসানো হয় একটি সিসিটিভি ক্যামেরা।
ছাত্রীদের দাবি, তাঁরা একাধিকবার ক্যামেরা অপসারণের দাবি তুললেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বরং ক্যামেরার দিক ঘুরিয়ে দিয়েই ‘সমাধান’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ছাত্রীদের অভিযোগ অনুযায়ী, ক্যামেরার নজরদারি ফুটেজ দেখতে পারেন—
প্রধান শিক্ষিকা সোমা বাগচি
হস্টেল ওয়ার্ডেন ঝুনু বণিক
অ্যাকাউন্টেন্ট ও সিসিটিভি ইনস্টলার সুব্রত মণ্ডল (শঙ্কু)
সুব্রতের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন ছাত্রীরা। এবারে স্নানের দৃশ্য নজরবন্দির অভিযোগে ক্ষোভ আরও চরমে পৌঁছেছে।
এই ঘটনায় শুধু ছাত্রীরাই নন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিভাবক ও কয়েকজন শিক্ষিকাও। এক অভিভাবক বলেন, “মেয়েরা এমন গুরুতর অভিযোগ করছে মানেই কিছু একটা ঘটেছে। এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হোক।” এক শিক্ষিকা জানান, বহুবার ছাত্রীদের অভিযোগ শুনে প্রধান শিক্ষিকাকে জানিয়েছিলেন, কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সুব্রত মণ্ডল তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, “গত পাঁচ মাসে হস্টেলের দিকে যাইনি। আমার ঘরে মনিটর থাকলেও সেটা কি আমার দোষ?” তাঁর দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। প্রধান শিক্ষিকা সোমা বাগচি বলেন, “ছাত্রীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনা সামনে আসতেই স্কুল শিক্ষা দফতর এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে নড়েচড়ে বসা হয়েছে। সূত্রের খবর, অভিযোগের সত্যতা ও স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি আবাসিক বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের গোপনীয়তার এমন চরম লঙ্ঘনের অভিযোগ নতুন করে প্রশ্ন তুলছে নিরাপত্তা এবং নৈতিকতার উপর। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব এলাকাবাসী এবং অভিভাবকেরা। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করাও প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।