আলিপুরদুয়ার জেলার ডুয়ার্স অঞ্চলে আবারও রাজনৈতিক সমীকরণে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলল। রবিবার ফালাকাটা ব্লকের তাসাটি চা বাগানে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে একযোগে ৩০টি পরিবার বিজেপিতে (BJP) যোগ দিল। ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন করে উত্তেজনা ও চর্চার সৃষ্টি হয়েছে।
ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মন নিজ হাতে যোগদানকারীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, ডুয়ার্সের চা শ্রমিক এলাকার মানুষের আস্থাই প্রমাণ করছে—তৃণমূলের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে এবং বিজেপির প্রতি সমর্থন সুসংহত হচ্ছে।
🏞️ তাসাটি চা বাগানে জমকালো যোগদান অনুষ্ঠান
এদিন তাসাটি চা বাগানের খুদি লাইনে বিজেপির পক্ষ থেকে একটি ছোট হলেও সুশৃঙ্খল যোগদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। চা শ্রমিক পরিবারগুলির উপস্থিতিতে এলাকাটি কার্যত ছোটখাটো রাজনৈতিক সমাবেশে পরিণত হয়। বিজেপির পতাকা হাতে নিয়ে একে একে ৩০টি পরিবার মঞ্চে উঠে নিজেদের সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেন।
যারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই মূলত চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের সদস্য—মহিলারা, যুবরা, প্রবীণ শ্রমিক—সবাই এতে অংশ নেন। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন, এই যোগদান ভবিষ্যৎ নির্বাচনের আগে শ্রমিক অঞ্চলে বিজেপির শক্তি আরও বাড়াবে।
🎙️ বিধায়ক দীপক বর্মনের বক্তব্য — “চা শ্রমিকদের পাশে সবসময় বিজেপি”
যোগদানকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন বলেন—
“ডুয়ার্সের চা শ্রমিকদের উন্নয়নের কথা তৃণমূল গত ১০ বছরে শুধু বলেছে, কাজ করেনি। মানুষ আর প্রতিশ্রুতি চায় না, বাস্তব উন্নয়ন চায়। বিজেপি সেই উন্নয়নকে প্রতিশ্রুতি নয়, দায়িত্ব হিসেবে দেখছে।”
তিনি আরও দাবি করেন—
“চা বাগানে স্বাস্থ্য পরিষেবা, আবাসন, পানীয়জল—সব ক্ষেত্রেই দুরবস্থা। তৃণমূল শুধু ভোটের আগে বাগান এলাকায় আসে। কিন্তু বিজেপি সারাবছর মানুষের পাশে থেকে সমস্যার সমাধানে লড়াই করে।”
বিধায়ক এও বলেন, আগামী দিনে ডুয়ার্সের প্রতিটি চা বাগান এলাকায় বিজেপি আরও শক্তিশালী হবে।
👥 বিজেপি নেতৃত্বদের উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—
-
বিজেপি নেতা জয় সূত্রধর,
-
ফালাকাটা এক নম্বর মণ্ডলের সভাপতি অনুপ দাস,
-
স্থানীয় বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা,
-
চা শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন স্থানীয় সদস্য।
তাঁরা প্রত্যেকেই যোগদানকারীদের অভ্যর্থনা জানিয়ে ভবিষ্যতে দলীয় সংগঠনে যুক্তভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
📌 কেন তৃণমূল ছাড়লেন ৩০টি পরিবার?
যোগদানকারীদের মতে, তাঁদের ক্ষোভের মূল কারণ—
-
বাগানে ন্যায্য মজুরি না পাওয়া
-
আবাসন সমস্যা
-
বাগানের মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব
-
পানীয়জলের দুরবস্থা
-
রাস্তা ও মৌলিক পরিকাঠামোর অবনতি
-
স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ
-
সরকারি প্রকল্পে বঞ্চনার অভিযোগ
এক যোগদানকারী বলেন—
“আমরা তৃণমূলকে বহু সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এলাকা থেকে ভোট নিলেও কাজ হয়নি। তাই উন্নয়নের স্বার্থে বিজেপিকে সুযোগ দিতে চাই।”
🗺️ ডুয়ার্সের চা বলয়ে পরিবর্তনের সঙ্কেত?
ডুয়ার্স, ডুয়ার্সের চা বাগান অঞ্চল রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বহু বাগান শ্রমিক পরিবার থাকে, যাদের ভোট একত্রে গেলে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে পারে। গত কয়েক বছরে বিজেপি এই অঞ্চলে সাংগঠনিকভাবে বড় বাড়ন্ত দেখেছে।
২০১৯ ও ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপি ডুয়ার্সে বড় আকারে বাড়তি ভোট পেয়েছিল।
তাই এই ৩০টি পরিবারের যোগদানকে বিজেপির দাবি অনুযায়ী “পরিবর্তনের লক্ষণ” হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তাসাটি চা বাগানের এই যোগদান অনুষ্ঠান নিছক একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়—ডুয়ার্সের চা বাগান এলাকায় ভোট রাজনীতিতে পরিবর্তনের নতুন বার্তা দিচ্ছে। জেলার রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—
-
চা শ্রমিকদের সমস্যা কি আগামী নির্বাচনে বড় ইস্যু হবে?
-
তৃণমূল কি শ্রমিক অঞ্চল হারাচ্ছে?
-
বিজেপির সংগঠন কি আরও শক্তিশালী হচ্ছে?
আসন্ন মাসগুলোতেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর স্পষ্ট হবে। তবে আপাতত বিজেপি ডুয়ার্সে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধিতে আরেকটি নতুন সংযোজন পেল—তাসাটি চা বাগানের ৩০টি পরিবার তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন।
