দার্জিলিং: উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলাগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দার্জিলিং জেলায় একাধিক স্থানে ভূমিধসের (Darjeeling landslide) ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৭ জনের, নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন। প্রশাসনের আশঙ্কা, চলমান উদ্ধার অভিযানের মাঝে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মিরিক, সুখিয়াপোখরি, জোরবাংলো, পুলবাজার এবং দার্জিলিং সদর এলাকায় মৃত্যুর খবর এসেছে। সুখিয়াপোখরি থানার অধীন এক ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ। প্রতিকূল আবহাওয়া ও দুর্গম ভূখণ্ডের কারণে উদ্ধারকার্য অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। জেলা পুলিশ ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) সর্বশক্তি দিয়ে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ৪ অক্টোবর সকাল ৮:৩০ থেকে ৫ অক্টোবর সকাল ৮:৩০ পর্যন্ত কুর্সিয়ং-এ ৩৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে, যা এই মৌসুমের সর্বাধিকগুলির একটি। এর ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এসডিএমএ এনডিআরএফের একটি দলকে মিরিকে পাঠিয়েছে। ডেপুটি কমান্ড্যান্ট বিবেকের নেতৃত্বাধীন দলটি বিকল্প রাস্তায় উদ্ধার কাজে রওনা হয়েছে কারণ প্রধান সড়কগুলির অনেকটাই অবরুদ্ধ।
এদিকে, মালদায় অবস্থানরত আরেকটি এনডিআরএফ দলকে লাল সতর্কতায় রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে তাদের দ্রুত সিলিগুড়িতে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ শোকবার্তা জানিয়ে বলেন, “দার্জিলিঙে ভূমিধসে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”
ভারি বৃষ্টিতে গোরখাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (GTA)-এর বহু এলাকায় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। ফলে টাইগার হিল, রক গার্ডেনসহ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের অনুরোধ করা হয়েছে অপ্রয়োজনীয় যাত্রা থেকে বিরত থাকতে এবং সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলতে।
কালিম্পং জেলার পরিস্থিতিও ক্রমশ গুরুতর হয়ে উঠছে। টানা বৃষ্টির ফলে বহু সড়ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পেডং ও ঋষিখোলার মধ্যে এনএইচ-৭১৭ই জাতীয় সড়কে ভূমিধসের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তা পরিষ্কার করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারি বৃষ্টির প্রভাবে বালাসন নদীর উপর ডুধিয়ার লোহার সেতুটি ভেঙে পড়েছে। এর ফলে সিলিগুড়ি ও মিরিকের মধ্যে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর জলস্তর ক্রমশ বাড়তে থাকায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গারিধুরা পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
দার্জিলিংয়ে আটকে পড়া পর্যটক ও বাসিন্দাদের সাহায্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ একটি হেল্পলাইন নম্বর (+91 91478 89078) প্রকাশ করেছে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলাতেও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। ভুটান থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে নদীর জলস্তর দ্রুত বাড়ছে।
আবহাওয়া দফতর দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে অরেঞ্জ অ্যালার্ট এবং আলিপুরদুয়ারে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদায় ইয়েলো অ্যালার্ট কার্যকর রয়েছে। নাগরিকদের গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে আশ্রয় না নেওয়ার এবং জলাশয়ের কাছে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।