দার্জিলিং: দুর্গাপুজোর ছুটির মরশুমে সাধারণত পাহাড়ের হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলো অতিথিতে উপচে পড়ে। কিন্তু এবছর দার্জিলিংয়ের পর্যটন (Darjeeling tourism) দৃশ্য অন্য রকম। হোটেলগুলো ফাঁকা, অতিথি সংখ্যা কম। হোটেল মালিক ও ট্যুর অপারেটররা উদ্বিগ্ন, কারণ পর্যটক কমে যাওয়ায় ব্যবসার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়েছে।
দার্জিলিং হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রদীপ মিত্র বলেন, “এবার দুর্গাপুজো শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ভারী বৃষ্টি ও ধসের খবর আসছে। সিকিম ও উত্তরবঙ্গের প্রধান যোগাযোগপথ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়েছে। তার প্রভাব দার্জিলিং পর্যটনে পড়েছে।”
হোটেল মালিক রাজেশ প্রসাদ বলেন, “বুকিং খুবই কম। আগ্রহ আছে, কিন্তু কনফার্মেশন নেই। ছোট হোমস্টে ও গেস্ট হাউসে অতিথি সংখ্যা এখন অনেক কম।”
দার্জিলিং ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আন্ড্রু ভুটিয়া বলেন, “হিমাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডেও বৃষ্টি ও ধসের খবর এসেছে। এই পরিস্থিতি দার্জিলিং পর্যটনে প্রভাব ফেলেছে। তবে বিদেশি পর্যটকদের আগমন এখনও গত বছরের মতোই রয়েছে।”
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, দুর্গাপুজোর সময় হোটেল বুকিং সাধারণত ৮৫–৯০ শতাংশ হয়। কিন্তু এবছর মাত্র ৫০ শতাংশ। বিশেষত ছোট হোমস্টে ও গেস্ট হাউসে অতিথি সংখ্যা কম। তবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পর্যটকরা ধীরে ধীরে পাহাড়মুখী হলে ব্যবসা ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
পর্যটন কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নিয়েছে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেল অতিরিক্ত তিনটি জয়রাইড চালু করেছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত অতিরিক্ত বাস পরিষেবা শুরু হয়েছে। এছাড়াও সিকিম রুটে সরকারি বাস চালু হয়েছে, যাতে পর্যটকরা সহজে পাহাড়ে আসতে পারেন।
দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে মোটামুটি ৪৫০০ হোটেল ও হোমস্টে রয়েছে। পর্যটকরা মূলত পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্ত পরিবেশ ও ঠান্ডা আবহাওয়া উপভোগ করতে আসেন। হোটেল ও ট্যুর অপারেটররা বিশেষ প্রমোশনাল অফার চালু করেছে। হাইকিং, জয়রাইড ও স্থানীয় সংস্কৃতির পরিচয় দেওয়ার জন্য প্যাকেজ তৈরি হয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ঝড়-বৃষ্টি ও ধসের খবর শোনার পর কিছু পর্যটক দ্বিধাগ্রস্ত হয়। তবে পর্যটন পরিষেবা ও আকর্ষণীয় কার্যক্রম চালু থাকায় ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটন ক্রমেই ফিরবে।
দার্জিলিং পর্যটন অর্থনীতির উপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অসময় পুজোর প্রভাব স্পষ্ট। তবু হোটেল মালিকরা আশাবাদী, পর্যটক ধীরে ধীরে পাহাড়ে ফিরবেন এবং পাহাড়ের প্রাণচাঞ্চল্য আগের মতো ফিরে আসবে।