পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত বর্ডার আউটপোস্টে (বিওপি) মোতায়েন সীমা সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) জওয়ানরা শুক্রবার হোলি উৎসব (BSF Holi celebration) পালন করেছেন। এ বছর হোলি উৎসবটি ১৪ মার্চ তারিখে পড়েছে। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে জওয়ানরা একে অপরের গায়ে রঙ মাখিয়ে এবং নৃত্যের মাধ্যমে আনন্দে মেতে উঠেছেন। এই উপলক্ষে বিএসএফ-এর ইন্সপেক্টর জেনারেল সূর্যকান্ত শর্মা জওয়ানদের এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এখানে উপস্থিত সমস্ত জওয়ানরা দেশের সুরক্ষায় নিয়োজিত। আমি তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার শুভকামনা জানাই। আমি জানি তাঁদের পরিবার হাজার মাইল দূরে রয়েছে, কিন্তু সমগ্র দেশ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে।”
এদিকে, জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে সশস্ত্র সীমা বাহিনী (এসএসবি) জওয়ানরাও শুক্রবার রঙের উৎসব হোলি উদযাপন করেছেন। সীমান্তে দায়িত্বরত এই জওয়ানরা একে অপরের গায়ে রঙ মেখে এবং নাচের মাধ্যমে উৎসবের আমেজে মেতে উঠেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরা এভাবে তাঁদের কর্তব্যের পাশাপাশি উৎসব পালন করে দেশবাসীর জন্য একটি অনুপ্রেরণার উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
Also Read | ২০২৩ বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় হোলিতে ক্রিকেট উৎসব
হোলি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু দেশবাসীর প্রতি তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “আপনাদের সকলকে হোলির শুভেচ্ছা। আনন্দ ও উল্লাসে ভরা এই উৎসব প্রত্যেকের জীবনে নতুন উৎসাহ ও শক্তি সঞ্চার করবে এবং দেশবাসীর মধ্যে ঐক্যের রঙ আরও গাঢ় করবে।” একইভাবে, রাষ্ট্রপতি মুর্মু এক্স-এ লিখেছেন, “রঙের উৎসব হোলির শুভ উপলক্ষে সমস্ত দেশবাসীকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। এই আনন্দের উৎসব ঐক্য, ভালোবাসা এবং সম্প্রীতির বার্তা দেয়। এটি ভারতের মূল্যবান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এই শুভ উপলক্ষে আমরা সকলে মিলে ভারত মাতার সন্তানদের জীবনে অগ্রগতি, সমৃদ্ধি এবং সুখের রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করি।”
দার্জিলিংয়ের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানদের হোলি উৎসব ছিল এক অনন্য দৃশ্য। এই জওয়ানরা যখন দেশের সুরক্ষায় নিযুক্ত, তখন তাঁরা তাঁদের পরিবার থেকে দূরে থেকেও উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছেন। একে অপরের গায়ে রঙ মাখিয়ে এবং নাচের তালে তাল মিলিয়ে তাঁরা এই দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলেছেন। ইন্সপেক্টর জেনারেল সূর্যকান্ত শর্মা তাঁর বক্তব্যে জওয়ানদের ত্যাগ এবং কর্তব্যপরায়ণতার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “এই জওয়ানরা দেশের প্রথম প্রতিরক্ষা রেখা। তাঁদের পরিবার থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও তাঁরা দেশের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। আমি তাঁদের এই নিষ্ঠার জন্য অভিনন্দন জানাই।”
হোলি উৎসব ভারতের একটি প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এটি বসন্তের আগমন এবং ভালোর উপর মন্দের জয়ের প্রতীক। এই দিনে মানুষ একে অপরের গায়ে রঙ মাখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। দার্জিলিংয়ের সীমান্তে জওয়ানদের এই উৎসব পালন দেখে বোঝা যায় যে, দেশের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা এই সাহসী সৈনিকরাও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাঁরা শুধু সীমান্তেই নয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
শুধু দার্জিলিং বা শ্রীনগর নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হোলি উৎসব উদযাপিত হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সুরক্ষা বাহিনী—সকলেই এই উৎসবে শরিক হয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরে এসএসবি জওয়ানরা যেভাবে হোলি পালন করেছেন, তা দেখে বোঝা যায় যে এই উৎসব শুধু রঙের খেলা নয়, এটি ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যেরও প্রতীক। জওয়ানরা একে অপরের সঙ্গে রঙ মেখে এবং নাচের মাধ্যমে তাঁদের সৌহার্দ্য প্রকাশ করেছেন।
হোলির এই উৎসব দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে একতার বন্ধনকে আরও মজবুত করে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং একটি সামাজিক উৎসব যা সকলকে একসঙ্গে আনন্দ করার সুযোগ করে দেয়। দার্জিলিংয়ের সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানদের এই উৎসব পালন এই বার্তাই দেয় যে, পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐক্যের চেতনা অটুট থাকে।
সীমান্তে মোতায়েন জওয়ানদের জন্য হোলির মতো উৎসব একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তাঁরা যখন দেশের সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকেন, তখন তাঁদের পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। তবুও তাঁরা এই উৎসবের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে একটি পরিবারের বন্ধন তৈরি করেন। সূর্যকান্ত শর্মার বক্তব্যে এই ত্যাগের কথা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “যখন গোটা দেশ ঘুমিয়ে থাকে, তখন এই জওয়ানরা জেগে থেকে সীমান্তে পাহারা দেন। তাঁদের এই উৎসর্গের জন্য আমরা গর্বিত।”
হোলির এই উৎসব শুধু আনন্দের নয়, বরং দেশের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতারও একটি প্রতীক। বিএসএফ এবং এসএসবি জওয়ানদের এই উদযাপন দেখে দেশবাসীও তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন যে, এই জওয়ানদের জন্যই আমরা নিরাপদে উৎসব পালন করতে পারি।
দার্জিলিংয়ের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানদের হোলি উৎসব এবং শ্রীনগরে এসএসবি জওয়ানদের উদযাপন ভারতের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং সৈনিকদের নিষ্ঠার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এই উৎসব শুধু রঙের খেলা নয়, এটি দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং ঐক্যের একটি উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা বার্তা এই উৎসবের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সীমান্তে দাঁড়িয়ে জওয়ানরা যেভাবে হোলি পালন করেছেন, তা প্রমাণ করে যে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং দেশপ্রেম কখনোই বিবর্ণ হয় না।