উত্তরবঙ্গের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়িকা শিখা চ্যাটার্জীর বিরুদ্ধে নারীপাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে (Human Trafficking)। সাম্প্রতিক একটি তদন্তে কেন্দ্র সরকারের স্বনির্ভর প্রকল্পের আড়ালে নারীপাচারের একটি বড় র্যাকেটের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ডাবগ্রাম ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের (জিপি) বিজেপি নিয়ন্ত্রিত বোর্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় ৫৬ জন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে, যারা এই পাচার চক্রের শিকার হয়েছিল। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, আড়াই বছর আগেও শিখা চ্যাটার্জীর বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ উঠেছিল, যা এখন প্রশ্ন তুলছে— এই ঘটনার সঙ্গে বিধায়িকার কতটা যোগ রয়েছে?
তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা সংগঠনের এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত পোস্টে বলা হয়েছে, “উদ্ধার ৫৬ জন তরুণী! কেন্দ্র সরকারের স্বনির্ভর প্রকল্পের আড়ালে নারী পাচারের ছক! বিজেপি বিধায়িকা শিখা চ্যাটার্জী ও বিজেপি বোর্ড ডাবগ্রাম ২নং G.P-র ঘটনা। বছর আড়াই আগেও শিখা চ্যাটার্জীর বিরুদ্ধে নারী পাচারের অভিযোগ উঠেছিল।
এখন প্রশ্ন উঠছে তাহলে এর সাথেও কি যোগ রয়েছে বিধায়িকার?” এই অভিযোগের পর তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে বিজেপির নৈতিক অধঃপতনের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে তীব্র সমালোচনা করেছে। তবে, এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে পুলিশ এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাগুলি কাজ শুরু করেছে।জানা গেছে, কেন্দ্র সরকারের স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রকল্পের নামে এই তরুণীদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে গঠিত হলেও, এই ঘটনায় দেখা গেছে যে এই প্রকল্পের নাম ব্যবহার করে অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলছিল। পুলিশের তদন্তে ডাবগ্রাম ২ নম্বর জিপি-র বিজেপি নিয়ন্ত্রিত বোর্ডের কিছু সদস্যের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। উদ্ধার হওয়া তরুণীদের মধ্যে বেশিরভাগই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা, যারা আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার থেকে এসেছেন।
শিখা চ্যাটার্জী, যিনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও ২০২৩ সালে নারীপাচারের অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় তদন্তে তাঁর সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তদন্ত পুরোপুরি ফলপ্রসূ হয়নি।
এবারের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে শিখা চ্যাটার্জী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা এই পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তৃণমূল নেতা রিজু দত্ত বলেন, “এটি বিজেপির দ্বিমুখী নীতির প্রমাণ। একদিকে তারা নারী ক্ষমতায়নের কথা বলে, অন্যদিকে তাদের নেতারা এই ধরনের জঘন্য কাজে জড়িত।”বিজেপি পক্ষ থেকে এই অভিযোগকে “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিখা চ্যাটার্জী এক বিবৃতিতে বলেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তৃণমূল আমার ইমেজ নষ্ট করতে এই ধরনের মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। আমি তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করব এবং সত্য সামনে আসবে।” তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জলপাইগুড়ির একজন বাসিন্দা বলেন, “যদি এই অভিযোগ সত্যি হয়, তবে এটি আমাদের অঞ্চলের জন্য লজ্জার।
কীভাবে নতুন কৃষক হিসেবে নাম নথিভুক্ত করবেন PM Kisan প্রকল্পে? জেনে নিন সহজ পদ্ধতি
আমরা কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।”পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া তরুণীদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে, এবং তাদের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। তদন্তকারী দল এখন এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে কাজ করছে। এই ঘটনা উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে, এবং আসন্ন দিনগুলিতে এই বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।