অয়ন দে, দিনহাটা: পূর্বে বিজেপির ৬ নম্বর মণ্ডল সভাপতি (BJP Mandal President) হিসেবে দায়িত্বে থাকা তপন বর্মন এবার আনুষ্ঠানিকভাবে গেরুয়া শিবির ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন। মঙ্গলবার দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের নাজিরহাটে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়। সেখানেই তৃণমূল কংগ্রেসের দিনহাটা ২ ব্লক সভাপতি দীপক কুমার ভট্টাচার্য তপন বর্মনের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন।
তপনবাবু জানান, তিনি অনেকদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন আর সেই দলে মন বসছে না। কারণ, বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, স্বজনপোষণ এবং বিভেদের রাজনীতি এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে সাধারণ মানুষের স্বার্থ সেখানে কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না। তাঁর মতে, বিজেপি এখন কেবলমাত্র হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে যেভাবে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, তা গোটা দেশের কাছে এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তাই তপনবাবুর সিদ্ধান্ত, “উন্নয়নের স্বার্থেই আজ আমি তৃণমূলে যোগদান করলাম।”
এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা ও ব্লক স্তরের একাধিক নেতা-কর্মী। বক্তৃতায় তৃণমূল নেতা দীপক কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “বিজেপি এখন আতঙ্কিত। ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে হার নিশ্চিত জেনে এখন নিজেদের দলে ভাঙন ঠেকাতেই অন্য দলে যোগদানকারী নেতাদের নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ আর বিভেদের রাজনীতিতে কান দিচ্ছেন না। তাঁরা উন্নয়ন চান, শান্তি চান, কর্মসংস্থান চান। সেই কারণেই আজ তপনবাবুর মতো অভিজ্ঞ নেতাও আমাদের দলে এসে শামিল হচ্ছেন।”
তৃণমূল নেতার দাবি, গোটা কোচবিহার জেলাতেই এখন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। বিভিন্ন গ্রামে এবং ব্লকে প্রতিদিন বিজেপি থেকে অসংখ্য নেতা ও কর্মী ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিচ্ছেন। “তপনবাবুর মতো নেতার যোগদান শুধু একটা দৃষ্টান্ত নয়, এটা আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির আগাম বার্তা,” বলেন দীপকবাবু।
তপন বর্মনের বক্তব্যের সূত্র ধরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে, সামনে ২০২৬-এর ভোটে দিনহাটা এলাকায় বিজেপির ভিত কতটা দুর্বল হচ্ছে? যদিও বিজেপি নেতৃত্বের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, তপন বর্মনকে দীর্ঘদিন ধরেই দলের কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। তাঁর দলত্যাগ বিজেপির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিনহাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একজন সক্রিয় মন্ডল সভাপতির দলত্যাগ নিঃসন্দেহে বিজেপির সংগঠনে চাপ সৃষ্টি করবে। কারণ, grassroots পর্যায়ে সংগঠন দুর্বল হলে তা ভোটের ময়দানে প্রতিফলিত হওয়া খুব স্বাভাবিক।
এই ঘটনার পর তপনবাবু জানান, তিনি এখন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন এবং দলীয় আদর্শ অনুসরণ করে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।
বিজেপির মন্ডল সভাপতির তৃণমূলে যোগদানের এই ঘটনা শুধু একটি রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নয়, বরং আগামী বিধানসভা ভোটের আগে কোচবিহার ও উত্তরবঙ্গ জুড়ে এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির আগে এমন দলবদল রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে চলেছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের।