অয়ন দে, কোচবিহার: রাজ্যে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন বা SIR প্রক্রিয়া শুরু হতেই বুথ স্তরে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। এবার কোচবিহারের মাথাভাঙ্গায় বিজেপির বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA-2)-কে মারধর ও গলায় জুতোর মালা পরিয়ে হেনস্থার (BJP BLA assault) অভিযোগ উঠল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ মাথাভাঙ্গা ১ ব্লকের পচাগড় পঞ্চায়েতের ছাটখাটেরবাড়ি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মাথাভাঙ্গা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ২৩৯ নম্বর বুথে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য বিশেষ SIR অভিযানের আওতায় ফর্ম বিলির কাজ চলছিল। নিয়ম মেনে বুথ লেভেল অফিসার (BLO) ফর্ম বিতরণ করছিলেন। প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও ভোটারদের সহায়তার জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA-2) নিবাস দাস। বিজেপির অভিযোগ, এই সময় আচমকাই তৃণমূলের কিছু স্থানীয় নেতা ও সমর্থক বুথ এলাকায় জড়ো হয়। সেই দলে বুথ লেভেল অফিসার নিশিথ রায়ও উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি বিজেপির।
অভিযোগ, কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিজেপি এজেন্ট নিবাস দাসকে ঘিরে ধরে শাসকদল সমর্থকেরা। তাঁকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করা হয়। এরপর শুরু হয় শারীরিক নিগ্রহ। জনসমক্ষে তাঁকে চড়, ঘুসি ও লাথি মারা হয় বলে অভিযোগ। এমনকি তাঁকে চরম অপমান করার উদ্দেশ্যে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু সাধারণ মানুষ এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁদেরও পিছিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা ক্ষোভে রাস্তায় নেমে পড়েন। উত্তেজিত জনতার ভিড় জমতে শুরু করে বুথের সামনে। পরিস্থিতি দ্রুত সংঘর্ষের দিকে যেতে পারে বুঝে মাথাভাঙ্গা থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের শান্ত করার পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহত নিবাস দাসকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর মাথাভাঙ্গা থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি। এছাড়াও বুথ লেভেল অফিসার নিশিথ রায়-সহ আরও তিনজনের নামে নির্বাচন কমিশনেও অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মাথাভাঙ্গা বিজেপির নেতা সুশীল বর্মন।
তিনি বলেন,“এটা শুধু একজন এজেন্টকে মারধরের ঘটনা নয়, এটা গণতন্ত্রকে অপমান করার ঘটনা। ভোট প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে চলতে দিতে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে বলেই আমাদের এজেন্টকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। আমরা দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই ও নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।”
যদিও বিজেপির তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত বুথ লেভেল অফিসার (BLO) নিশিথ রায়। তিনি জানিয়েছেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। আমি এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নই। তদন্ত হলেই সত্য সামনে আসবে।”
অন্যদিকে, বিষয়টিতে কিছুটা কৌশলী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন। তিনি বলেন, “আমরা এখনো ঘটনার বিস্তারিত পাইনি। ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের কাজকে দল কখনই সমর্থন করে না। রাজনীতিতে সহিংসতা ও অশালীন আচরণের কোনও স্থান নেই।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যে SIR কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে বুথ স্তরে রাজনৈতিক তরজা তীব্র আকার ধারণ করছে। বিভিন্ন জেলায় ভোটার ফর্ম বিলি, নাম সংশোধন ও তালিকা যাচাই করতে গিয়ে শাসক-বিরোধী সংঘাতের ঘটনা বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে বুথ স্তরে আরও কড়া নজরদারি রাখতে হবে, না হলে পরিস্থিতি ক্রমেই অশান্তির দিকে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বুথ ও সংলগ্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষ এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই বলছেন, ভোট প্রক্রিয়া সুষ্ঠু রাখা প্রশাসনের দায়িত্ব, আর সেখানে এমন হামলা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।


