উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে, যেখানে একদিকে রপ্তানি (Tea Gardens) বাজারে ধস, অন্যদিকে আবহাওয়ার পরিবর্তনে উৎপাদন কমে গেছে। দার্জিলিং ও আশপাশের চা বাগানগুলোতে কঠিন পরিস্থিতি চলছে, যার ফলে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে ১৪টি চা বাগান এবং বিক্রির পথে রয়েছে অন্তত ২৫টি। চা বণিকসভা ও চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গিয়েছে যে, এই পরিস্থিতি দ্রুত আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রপ্তানি সংকটে দার্জিলিং চা
দার্জিলিং চায়ের একটি বিশাল বাজার রয়েছে ইউরোপে, বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে। এক দশক আগেও, দার্জিলিং চায়ের বার্ষিক উৎপাদন ছিল প্রায় ১৪ মিলিয়ন কেজি, যার মধ্যে ৮০ শতাংশ রপ্তানি করা হতো ইউরোপীয় দেশে। কিন্তু বর্তমানে দার্জিলিং চায়ের বার্ষিক উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫.৫ মিলিয়ন কেজিতে, এবং এর মধ্যে ২ মিলিয়ন কেজি রপ্তানি হচ্ছে। এই পতনকে অনেকেই রপ্তানি বাণিজ্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হিসেবেই দেখছেন(Tea Gardens)
আবহাওয়ার পরিবর্তন: উৎপাদন কমে যাওয়া
দার্জিলিং চা শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে পাহাড়ের আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন।(Tea Gardens) কয়েক দশক ধরে দার্জিলিং পাহাড়ে বৃষ্টিপাত প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। গত কয়েক বছরে,(Tea Gardens) চায়ের মৌসুমের প্রথম ফ্লাশের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টির পরিমাণও কমে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত, দার্জিলিং চায়ের ফার্স্ট ফ্লাশের জন্য যেসব পাতা তোলা হয়, তা মোট উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ হয়ে থাকে। এই পাতা থেকে তৈরি চা জার্মানি, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে রপ্তানি হয়, কিন্তু এর উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদেশী বাজারে চায়ের সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে(Tea Gardens)
যুদ্ধের প্রভাব ও বাজারের সংকোচন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের উপর পড়েছে।(Tea Gardens) রপ্তানি বাণিজ্যে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বাজার ছিল বড় অংশীদার, কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই দুই দেশে চায়ের রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এর পাশাপাশি, শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েক মাস চা রপ্তানি বন্ধ ছিল। এই সংকটের কারণে, উত্তরবঙ্গের চা উৎপাদনকারীরা বিদেশী বাজারে তাদের পণ্য পাঠাতে পারছেন না, যার ফলে তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন(Tea Gardens)
লোকসান ও বিক্রি
উত্তরবঙ্গের চা বাগান মালিকরা বর্তমানে বড় ধরনের লোকসান ভোগ করছেন। (Tea Gardens) চা বণিকসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে এক কেজি সিটিসি চা উৎপাদনে খরচ হচ্ছে প্রায় দেড়শো টাকা, কিন্তু বাজারে তা ১২০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চা বাগান মালিকরা। এর ফলে চা শিল্পের বড় ক্ষতি হচ্ছে। অনেকে বলছেন, গুদামে চা পচে নষ্ট হতে পারে, তাই তারা অবিলম্বে চা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কাঁচা চা পাতার দামও কমেছে
এদিকে, তৈরি চায়ের বাজারে সংকট এবং উৎপাদন হ্রাসের কারণে কাঁচা চা পাতার দামও পড়ে গেছে। এক কেজি কাঁচা চা পাতার উৎপাদন খরচ প্রায় ২১ টাকা হলেও, বর্তমানে বাজারে এর দাম ১৫ থেকে ১৯ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “আন্তর্জাতিক চায়ের বাজারে অব্যবস্থাপনা ও পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার কারণে কাঁচা চায়ের দাম মিলছে না, এবং এই অবস্থায় আমাদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।”
চা বাগান বিক্রির চাপ
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, উত্তরবঙ্গের আরও অনেক চা বাগান বিক্রির জন্য খদ্দের খুঁজে বেড়াতে পারে। নর্থবেঙ্গল টি প্রডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি সতীশ মিক্রকা জানিয়েছেন, তার নিজস্ব বাগানও বিক্রির চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “একদিকে প্রকৃতির প্রতিকূলতা, অন্যদিকে রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নেপাল চায়ের নিম্নমানের প্রতিযোগিতাও আমাদের আরও বিপদে ফেলেছে।”
ভবিষ্যতের সংকট
দার্জিলিং সহ উত্তরের চা শিল্পে যে সংকট চলছে, তা আগামী দিনে আরও গভীর হতে পারে। যদি আবহাওয়া পরিবর্তন, যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সংকটের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের ভবিষ্যত অন্ধকার হতে পারে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তা না মিললে, উত্তরবঙ্গের চা শিল্প সংকটে আরও নিচে নেমে যাবে, যা চাষী ও শ্রমিকদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।