দক্ষিণের দুর্ভোগ মুক্তির প্রার্থনায় অবাক উত্তর

চলছিল নিম্নচাপের বৃষ্টি। তার উপরে জল ছেড়েছে ডিভিসি। দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত (Floods in South Bengal)। দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। এরই মাঝে চলছে প্রার্থনা। সোশাল…

Prayer Request Warning of Potential Floods in South Bengal

চলছিল নিম্নচাপের বৃষ্টি। তার উপরে জল ছেড়েছে ডিভিসি। দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত (Floods in South Bengal)। দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন। এরই মাঝে চলছে প্রার্থনা। সোশাল মিডিয়ায় প্রার্থনা। বাংলার জন্য প্রার্থনা। প্রে ফর বেঙ্গল। পশ্চিমবঙ্গের ম্যাপের ছবির মধ্যে দুর্ভোগের কোলাজ। রাজ্যের শাসকদলের অনেক নেতা-কর্মী সেই ছবি শেয়ার করছেন। তালিকায় সমর্থকরাও আছেন। বিভিন্ন রাজ্যের কথা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, ওই রাজ্যের জন্য হলে বাংলার জন্য কেন হবে না। অর্থাৎ বাংলার দুর্গতদের জন্য কেন প্রার্থনা হবে না।

এখানেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, ডিভিসির ছাড়া জলে ভাসছে দক্ষিণবঙ্গের সাত জেলা। এ নিয়ে প্রে ফর বেঙ্গল শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাস আগে উত্তরবঙ্গে অতিবৃষ্টির জেরে দুর্ভোগ চলছিল। তখন কেন এই প্রার্থনা হয়নি? মাস খানেক ধরে মালদার ভূতনি জলে ডুবে। উত্তরবঙ্গের এই এলাকার দুর্দশা নিয়েও প্রার্থনার উদ্যোগ নেয়নি কেউ। অনেকে বলেন, মালদা নিয়ে যখন কলকাতার বাবুরা সরব হয়েছিলেন বটে। সেটা ছিল কৌশল। আর জি করে ঘটনা থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল। সরাসরি বলা হচ্ছিল, সবাই আর জি কর নিয়ে ব্যস্ত। আর ভূতনি ভাসছে। কিন্তু প্রে ফর ভূতনি নামে কোনও প্রচার শুরু হয়নি।

   

গত কয়েক মাসে বারবার ভারি বৃষ্টির সাক্ষী থেকেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। তিস্তার পাড় ভেঙেছে। কালিম্পং থেকে দার্জিলিং। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ার। কিংবা দুই দিনাজপুর। বারবার জলমগ্ন হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। অনেকেই ঘরছাড়া হয়েছেন। রাস্তা থেকে ব্রিজ অনেক কিছুই ভেঙে পড়েছে। তখন কিন্তু প্রে ফর বেঙ্গল হয়নি।

এখন দক্ষিণবঙ্গ ভাসছে। গঙ্গার পূর্বের জেলাগুলিতে বেশিরভাগই নিকাশির সমস্যার জন্য জলমগ্ন। পশ্চিমের জেলাগুলিকে ভাসিয়েছে ডিভিসির জল। ডিভিসির মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হয়- পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম। পুরুলিয়ার বেশ কিছু অংশও এখন ডিভিসির জলে ভাসছে। এ নিয়ে রাজনীতিরও হাওয়া গরম। ডিভিসি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা হওয়ায় মোদি সরকারকে নিশানা করছে রাজ্যের শাসক। পালটা জবাবে রাজনীতির পারদ চড়েছে। এরপরেই শুরু হয়েছে প্রে ফর বেঙ্গল নামের প্রচার।

গত মার্চে কয়েক মিনিটের টর্নেডোয় তছনছ হয় জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। তড়িঘড়ি ছুটে যান রাজনীতির কারবারিরা। তারপরেও বিভিন্ন সময়ে অনেক বিপর্যয় দেখেছে উত্তরবঙ্গ। তখন কিন্তু কোনও রাজনীতির দাদা-দিদিদের পা পরেনি উত্তরের জেলায়। টর্নেডো হয়েছিল ভোটের মুখে। তখন কি দুর্গতদের পাশে থাকার পিছনে রাজনীতি ছিল? পরের ঘটনাগুলো যখন হচ্ছে তখন ভোট মিটে গিয়েছে। তাই কি দরকারও মিটে গিয়েছিল?

রাজ্যে সামনে তেমন কোনও ভোট নেই। তারপরেও দুর্ভোগের সময়ে দাদা-দিদিরা দক্ষিণবঙ্গের ময়দানে নেমেছেন। প্রে ফর বেঙ্গল বলতে এখন মালদাকেও ধরা হচ্ছে বটে। কিন্তু সেটা তো দক্ষিণের জেলাগুলির দুর্যোগের পরে। এগুলো কি বঞ্চনা নয়? এ প্রশ্ন থেকেই যায়।