ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জামিন নওশাদ সিদ্দিকীর

গতকাল, ২১ আগস্ট কলকাতার ধর্মতলায় ওবিসি সংরক্ষণ, SIR এবং ওয়াকফ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে আইএসএফ-এর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় (Naushad Siddiqui)। এই বিক্ষোভে পুলিশের…

Naushad Siddiqui

গতকাল, ২১ আগস্ট কলকাতার ধর্মতলায় ওবিসি সংরক্ষণ, SIR এবং ওয়াকফ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে আইএসএফ-এর নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় (Naushad Siddiqui)। এই বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে আইএসএফ কর্মীদের তুমুল ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পুলিশের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা বেআইনি জমায়েত, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, এবং পুলিশের উপর হামলার চেষ্টা করেছে।

এই ঘটনার জেরে নওশাদ সিদ্দিকী সহ ৯৪ জন আইএসএফ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাদের জোড়াসাঁকো থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ভোর সাড়ে ৪টায় নওশাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।ধর্মতলার এই বিক্ষোভ ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে চলমান বিতর্কের একটি অংশ।

   

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পরে জারি করা প্রায় ৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে, যা রাজ্যের শিক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আইএসএফ-এর এই বিক্ষোভ ছিল জনমত গঠন ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি অংশ।

আজ, ২২ আগস্ট, নওশাদ সিদ্দিকী সহ গ্রেফতার হওয়া আইএসএফ কর্মীদের ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পেশ করা হয়। সকাল থেকেই আদালত চত্বরে আইএসএফ কর্মী ও সমর্থকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তারা নওশাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। শুনানির সময় নওশাদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য যুক্তি তুলে ধরেন যে, পুলিশের অভিযোগে পুলিশকর্মীদের উপর হামলার কোনো প্রমাণ নেই।

এই যুক্তির ভিত্তিতে আদালত নওশাদ সহ ৯৪ জনের জামিন মঞ্জুর করে। প্রত্যেককে ৫০০ টাকার বন্ডে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়।জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর আদালত চত্বরে আইএসএফ সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ ও উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। নওশাদ আদালত থেকে বের হওয়ার সময় বলেন, “এই জামিন আমাদের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবে। স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।”

নওশাদের জামিনের ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী এই গ্রেফতারের সমালোচনা করে বলেছেন, “একজন বিধায়ককে এভাবে গ্রেফতার করা এবং জামিনের জন্য আদালতে যেতে হওয়া গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর আঘাত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আন্দোলন করেছেন, কিন্তু এখন তিনিই আন্দোলনকারীদের দমিয়ে রাখতে চাইছেন।”

Advertisements

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্ররা এই গ্রেফতারকে বৈধ বলে দাবি করেছেন। তাদের মতে, পুলিশের উপর হামলা ও বেআইনি জমায়েতের অভিযোগে নওশাদ ও তার সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে, জামিন মঞ্জুর হওয়ায় তৃণমূল শিবিরে কিছুটা অস্বস্তি দেখা দিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে চলমান বিতর্ক বাংলার রাজনীতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে ২০১০ সালের পর জারি করা ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করা হয়েছে, যা শিক্ষা ও নিয়োগে সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে।

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক স্থগিতাদেশে রাজ্য সরকারকে নতুন তালিকার ভিত্তিতে ফলাফল প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হলেও, এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও বাকি। নওশাদ সিদ্দিকী এই ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা তাকে রাজনৈতিক মঞ্চে আরও উল্লেখযোগ্য করে তুলেছে।

নওশাদ সিদ্দিকীর জামিন রাজ্যের আইএসএফ শিবিরে নতুন উদ্যম সঞ্চার করেছে। তারা এই ঘটনাকে তাদের আন্দোলনের জয় হিসেবে দেখছে। তবে, ওবিসি সংরক্ষণ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই বিতর্ক অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এ সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানি হতে পারে, যা এই ইস্যুর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

নওশাদ সিদ্দিকীর জামিন ওবিসি দুর্নীতি বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের এই সিদ্ধান্ত আইএসএফ-এর আন্দোলনকে নতুন গতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। আমাদের সাথে থাকুন আরও সর্বশেষ খবরের জন্য।