ওরা এগারো! এখনও বেঁচে আছে স্মৃতিতে। মরেছিল দু’দশক আগে। তখন ভরা বামফ্রন্ট জমানা। বীরভূমের মাটিতে সিপিআইএমের দাপটে বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খেত। এখন যেমন টিএমসির দাপটে খায়!
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে সিপিআইএম প্রতিনিধিদের নিয়ে দলটির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ঢুকতেই তাঁকে ছায়ার মতো তাড়া করল সূচপুর গণহত্যার ঘটনা। তখন ছিল সিপিআইএমের সরকার। বীরভূমের নানুর-সূচপুরের সেই মৃত ১১ জন ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থক।
![](https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2022/03/selim-2.jpg)
এখন সরকার বদলে গেলেও রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে মৃত দশজন সেই টিএমসিরই সমর্থক।
২০০০ সালের ২৭ জুলাই ঘামে প্যাচ প্যাচ করা গরমের দিন। নানুরের রুক্ষু মাটিতে গরম ধুলো উড়েছিল, তাল গাছের পাতায় হাওয়া লেগে খড়খড় করছিল। এসবই ছিল স্বাভাবিক। তেমনই এক দিনে জমি দখল ঘিরে সূচপুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে জড়ায় সিপিআইএম ও তৃণমূল কংগ্রেস।
কংগ্রেস ভেঙে নবগঠিত টিএমসি তৈরির পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সেটাই প্রথম বৃহত্তম রাজনৈতিক বাধা। বীরভূম তখন ‘রা কাড়তে’ (কথা বলা) পারেনা টিএমসি। সূচপুরে মমতার সংগঠন ছিল কিছুটা। ফলে টিএমসি লড়তে যায়! রক্তাক্ত হয় সূচপুর।
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ বাম জমানায় বীরভূম থেকে পরপর রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও গণহত্যার সংবাদ এসেছিল। বীরভূম মানেই ‘বোমাভূম’, এই তকমা এখনও ভরা তৃণমূল কংগ্রেস জমানায় মেটেনি।
‘বোমাভূম’-বীরভূমে সেই বোমা রাজনীতি ধরেই তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে প্রথম ‘গণহত্যা’ সংঘটিত হয়েছে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে। পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে দশ জনকে। ঘটনার পর সেই গ্রামে বুধবার ঢুকলেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি দাবি করেছেন, পুলিশের সামনেই আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে গ্রামবাসীদের। সেলিমের সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন সিপিআইএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। তিনিও বগটুই গ্রামের ঘটনায় রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করেন। বগটুইতে নিহত ১০ (আরও মৃত্যুর সম্ভাবনা) জনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন সেলিম।
যে বীরভূম গত দশ বছরে একমাত্র নানুর থেকে সিপিআইএম সাংগঠনিক শক্তি দেখিয়েছে আর গোটা জেলায় হাঁড়ির হাল, সেখানে সেলিমের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক মহল আলোড়িত। কারণ বিধানসভার ভোটে শূন্য হয়ে গিয়েছে সিপিআইএম। বিরোধী দল এখন বিজেপি। তবে তারা কলকাতায় বিক্ষোভ দেখিয়ে রণে ভঙ্গ দেয় বলে কটাক্ষ চলছে।
বীরভূমে অস্তিত্বই নেই বিজেপির এটা প্রমাণ হয় সদ্য শেষ হওয়া পুরভোটের ফলাফলে। জেলার সব পুরসভা টিএমসির দখলে। আর রামপুরহাট পুরসভার একটি ওয়ার্ড সিপিআইএমের দখলে। এই জেলায় আগামী ভোটগুলিতে মূল লড়াই টিএমসি ও সিপিআইএমের মধ্যে।
গত বিধানসভা ভোটে নানুর থেকে গত বিধানসভা ভোটে আর জয়ী হয়নি সিপিআইএম। টিএমসির জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন, নানুর চাই। বিরোধী শূন্য হবে জেলা। তাই হয়েছে। সেই বীরভূমে দাঁড়িয়ে বগটুই গ্রামের গণহত্যা নিয়ে সরব সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক। টিএমসি নীরব। বগটুই গ্রামের গণহত্যার প্রসঙ্গে মহন্মদ সেলিম বলেছেন, বিরোধী শূন্য করতে গিয়ে তৃণমূল এখন তৃণমূলকেই শূন্য করছে।