সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে এক ন্যক্কারজনক ঘটনা, যা রাজ্যের রাজনীতির গতি-প্রকৃতির উপর নতুন বিতর্ক উত্থাপন করেছে। একদিকে শাসক দলের আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ, অন্যদিকে বিরোধী দলের প্রতিবাদ—রাজ্যে চলছে তুমুল রাজনৈতিক তরজা।
এর মধ্যে রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ও দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহর মন্তব্য অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার দাবি, সিপিএম পার্টি অফিসগুলির ভাঙচুর কেন ঘটেনি, সেটাই আশ্চর্যজনক। এক প্রশ্নের উত্তরে উদয়ন গুহ বলেন, “আমি ভাঙতে বলছি না, তবে একজন ভদ্রলোকের ওপর আক্রমণ হওয়ার পরও যে বাকিগুলো ভাঙেনি, এটা আশ্চর্যের বিষয়।”
এই বক্তব্যের পর থেকেই রাজ্যজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিরোধীরা বলছেন, মন্ত্রীর এই মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য, তা নয়, এটি সন্ত্রাস ও অরাজকতার প্রতি এক ধরণের ইঙ্গিত। একদিকে যেমন উদয়ন গুহর মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করছে শাসক দল, তেমনি অন্যদিকে তার সমর্থকদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি কঠোর অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে।
রাজ্যের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন বিভিন্ন স্থানে সিপিএম পার্টি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বারুইপুরের সিপিএম পার্টি অফিসে তালা দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এমনকি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও আটকা পড়েন পার্টি অফিসে। পরে তিনি বলেন, “কোনও নেতা যদি ফুটেজ খাওয়ার জন্য পার্টি অফিসে অসভ্যতা করেন, তা চলতে পারে না।” তার এই বক্তব্যে দলের অভ্যন্তরীণ অস্বস্তির কথা প্রকাশ পায়।
এছাড়া উদয়ন গুহর আরেকটি মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিয়েছে। তিনি ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গে বলেন, “যেখানে ক্যাপসুলের প্রয়োজন সেখানে ক্যাপসুল, যেখানে হোমিওপ্যাথির গুলি হবে, সেখানে হোমিওপ্যাথি গুলি এবং যেখানে অপারেশনের প্রয়োজন হবে, সেখানে অপারেশন করে বিজেপি নেতাদের বুঝিয়ে দিতে হবে।” এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, মন্ত্রীর বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রতি হুমকি এবং আক্রমণের এক খোলামেলা ভাষ্য।
এদিকে, রাজ্যের শাসক-বিরোধী দুই শিবিরের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ফলে এক অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা একে অপরকে নানা ভাবে আক্রমণ করে চলেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে হামলা-পাল্টা হামলার খবর আসছে। কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীরা একে অপরের ওপর আক্রমণ করে, আবার অন্যদিকে শাসক দলের কর্মীরা তৎপর হয়ে উঠেছে প্রতিবাদী দলের অফিসে হামলা চালাতে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ এবং আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখযোগ্য, রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি আরও অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। রাজনৈতিক সংঘাতের এক কঠিন চক্রে পড়েছে রাজ্য, যেখানে একদিকে দলীয় আদর্শ, অন্যদিকে ক্ষমতার লোভ—এই দুইয়ের মধ্যে অশান্তি বাড়ছে। শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক মারপ্যাচ ক্রমশ বেড়েই চলেছে, এবং তার ফলস্বরূপ রাজ্যের সাধারণ মানুষ আরও অস্বস্তিতে পড়ছে।
অতএব, উদয়ন গুহর মন্তব্য এবং রাজ্যের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে ঘিরে এক নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বপূর্ণ এবং সংযত মন্তব্য আশা করা হলেও, বাস্তবতা হচ্ছে যে, প্রতিটি রাজনৈতিক পদক্ষেপই রাজ্যের সামাজিক শান্তির ওপর এক ধরনের প্রভাব ফেলছে।