Purba Medinipur: অধিকারী গড়ে গিরি রাজত্ব, মন্ত্রী অখিলের পুত্র কাঁথির পুরপতি

কাঁথি: কাঁথি পুরসভার নতুন চেয়ারম্যান হলেন সুপ্রকাশ গিরি৷ ২০২২ সালের পুরভোটে কাঁথি পুরসভা জিতে তৃণমূল চেয়ারম্যান হিসাবে চেয়ারে বসায় সুবল মান্নাকে৷ তবে সম্প্রতি শিশির অধিকারীকে…

কাঁথি: কাঁথি পুরসভার নতুন চেয়ারম্যান হলেন সুপ্রকাশ গিরি৷ ২০২২ সালের পুরভোটে কাঁথি পুরসভা জিতে তৃণমূল চেয়ারম্যান হিসাবে চেয়ারে বসায় সুবল মান্নাকে৷ তবে সম্প্রতি শিশির অধিকারীকে ‘গুরুদেব’ বলে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে সেই পদ খুইয়েছেন তিনি৷ রাজনৈতিক গুরু বলে সম্বোধন করে বিতর্কে জড়ান তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি পুরসভার অপসারিত চেয়ারম্যান সুবল মান্না৷ এরপরই নতুন চেয়ারম্যান হন মন্ত্রী পুত্র সুপ্রকাশ গিরি৷

অধিকারীর ছায়া কাঁথি পুরসভা থেকে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হল! এমনই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বৃহস্পতিবার নতুন ভাবে কাঁথি পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি’র শপথ নিলেন। পুরসভার অফিস রুমে কাঁথির মহকুমা শাসক শপথ বাক্য পাঠ করান। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাঁথি পুরসভা বিচিং ও ফিনাইল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়।

পুরকর্মী থেকে কাউন্সিলরদের দাবি কাঁথি পুরসভা থেকে কার্যত অধিকারীদের সাফ হল। কারণ তৃণমূলের প্রতীকে জিতে পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্না হলেও অধিকারীর কথা’তে পুরসভা চালাতেন। নতুন ভাবে পুরপ্রধান সুবল কুমার নাম প্রস্তাব হতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরকর্মী থেকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। আবির উড়িয়ে ও আতশবাজি ফাটিয়ে উল্লাস করেন। পুরপ্রধান হিসেবে শপথ নিয়ে হুশিয়ারী সুরে বলেন ” মানুষের টাকা নিয়ে কেউ যদি লুঠ করে ও ছিনিমিনি করে। তাহলেই তার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াবো ও তদন্ত হবে। আইন আইনের পথে চলবে।’’

এদিন সকালে পুরসভার মিটিং হলে রাজ্যের কারাদফতরের মন্ত্রী অখিল গিরি, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পীযূষ কান্তি পণ্ডা, জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক, জেলা সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান আনোয়ার উদ্দিন, কাঁথি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি হরিসাধন দাস অধিকারী সহ নেতৃত্বদের উপস্থিতিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের হুইপ জানিয়ে দেন। তাতেই কাঁথি পুরসভা পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি, উপ পুরপ্রধান নিরঞ্জন মান্না, তিন জন সিআইসি রীনা দাস, আলেম আলি খাঁন ও অতনু গিরি। দলীয় হুইপ মেনেই পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি’কে সিদ্ধান্ত মেনে নেন সমস্ত কাউন্সিলাররা। তারপরেই কাঁথি মহাকুমা শাসক শৌভিক ভট্টাচার্য নবনির্বাচিত পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি’কে শপথ বাক্য পাঠ করান।

কারাদপ্তরের মন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, “কাঁথি পুরসভা পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্নার বিরুদ্ধে ১৬ জন কাউন্সিলর অনাস্থা এনেছিল। তারপরেই অপসারিত করা হয়। আজকে নতুন পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি’কে নিযুক্ত করা হল। বিধানসভা নিরিখে পুরসভা’কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্না দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে এরকম কথা বলা ঠিক নয়। প্রণাম করার জন্য পদ যাচ্ছে, এটা সুবলবাবু চালাচ্ছে। রাস্তায় যদি কোন বিরোধী লোককে দেখতে পাই হাত দিয়ে দেখাই সেটা সৌজন্যতা। প্রণাম করার জন্য পথ থেকে সরে যেতে বলা হয়নি, যে ভাবে বক্তব্য রেখেছেন তার জন্যই সরে যেতে বলা হয়েছে। বক্তব্য রেখেছেন সেটা দলবিরোধী কাজ। যে পুরপ্রধানের পথটা পেয়েছেন সেটা শিশিরবাবুর জন্য, সেটা দলকে অস্বীকার করেছো, বিড়ম্বনা ফেলেছে৷”

সদ্য শপথ নেওয়া কাঁথি পুরসভা পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি বলেন, “আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদর্শ মেনেই রাজনীতি করি। আগামী দিনের কাঁথি পুরসভা মডেল পুরসভা হবে। আমার নির্দিষ্ট একটি পুরসভা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে। তা এখন সবিস্তারে বলবো না! যানজট মুক্ত ও পানীয় জল কাঁথিবাসী’কে পুরস্কার দেওয়া আমার প্রথম কাজ। সুবল কুমার মান্না যতদিন ছিলেন আমাদের পুরপ্রধান ছিলেন। এ বিষয়ে বেশি কিছু বলব না। এটা সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। উন্নয়ন করাই আমাদের কাজ। সমস্ত কাউন্সিলর’দের পাশে নিয়ে মানুষের উন্নয়ন করা প্রথম কাজ। এছাড়াও ইলেকট্রিক চুল্লি অসমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে সেটা তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণ করা। দল যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত করব৷”

তিনি হুশিয়ারি সুরে আরও বলেন, “মানুষের টাকা নিয়ে কেউ যদি লুঠ করে ও ছিনিমিনি করে। তাহলেই তার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াবো ও তদন্ত হবে। আইন আইনের পথে চলবে। প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্না দলের কথা শোনেনি। দলনেত্রী নির্দেশকে অমান্য করেছে। দল তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে৷”

তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিরোধী কাউন্সিলর তথা বিজেপি নগর মণ্ডলের সভাপতি সুশীল কুমার দাস বলেন, “আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। টাকা তোলার লাইসেন্স এটাই মূল লক্ষ্য। একজনকে সরিয়ে আর একজন’কে বসানো হলো। তৃণমূলের কোন নেতা রাস্তা দিয়ে গেলেই চোর চোর চিৎকার করছে। পুরসভার কোন উন্নয়ন নেই। পুর কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। প্রাক্তন পুরপ্রধান সুবল কুমার মান্না কম টাকা তুলতো, এই পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি বেশি টাকা তুলবে। সমস্ত কাউন্সিলররা ভাগ করে নিন দু’মাস ধরে পুরপ্রধান। মন্ত্রীর ছেলে বলে পদ দেওয়া হচ্ছে৷”